খিলজি শাসন, ঈশা খাঁ, ১৮৫৭ সিপাহি বিপ্লবের ইতিবৃত্ত (৩টি বই একত্রে)
খিলজি রাজবংশ ছিল তুর্কি-আফগান বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজবংশ। ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই রাজবংশ ভারত উপমহাদেশের বিরাট অংশ শাসন করে। ১২৯০ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে এই রাজবংশের পত্তন করেন সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নরম মেজাজের শাসক। তার মৃত্যুর পর ১২৯৬ সালে সালতানাতের শাসনভার গ্রহণ করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি। তিনি ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক। সিংহাসনে আরোহণ করেই সুলতান আলাউদ্দিন মনোনিবেশ করেন রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত করতে। এজন্য তিনি পরিচালনা করেন বহু যুদ্ধাভিযান। এসব যুদ্ধের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চল বিজিত হতে থাকে।
একইসাথে হস্তগত হতে থাকে প্রচুর ধন-সম্পদ, যা তার রাজ্যকে করে তোলে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। তিনি একজন দক্ষ সেনাপতি হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন অভিজ্ঞ শাসক ও রাজনীতিবিদ। তিনি তার রাজ্যের জন্য অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেন, করব্যবস্থার সংস্কার করেন, চিরতরে বন্ধ করেন বিদ্রোহের পথ। তার শাসনামল ছিল শক্তি, ন্যায় ও সমৃদ্ধির। তিনি ইন্তেকাল করেন ১৩১৬ সালে। সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির পর কিছুদিন শাসন করেন তার ক্রীতদাস মালিক কাফুর। তারপর সিংহাসনে আরোহণ করেন আলাউদ্দিনের ছেলে সুলতান কুতুবউদ্দিন মোবারক শাহ খিলজি।
তিনি রাজ্য পরিচালনায় অনেকটা সহজতার নীতি অবলম্বন করেন। তিনি নিহত হন খসরু খানের হাতে। এরপর খসরু খানের হাত থেকে দিল্লি সালতানাত চলে যায় তুঘলকদের কাছে। এভাবেই শেষ হয় খিলজি শাসন।
৩রা মার্চ, ১৫৭৫। তুকারয়ের ময়দানে প্রানপণ লড়াই শেষে মুঘল আর বাঙ্গালী সালতানাত দুই পক্ষই বিদ্ধস্ত। ক্লান্তি আর ধ্বংসযজ্ঞে কার ক্ষতি বেশি সে হিসাব কষে কার সাধ্যি! তবে বাঙ্গালাহর সেনাপতি গুজর খান নিহত, আহত জুনায়েদ কররানি মালাকুল মউতের অপেক্ষায় আর সুলতান দাউদ কররানি পলাতক। তাই রক্তাক্ত শমসের আর হাজার বছরের পরম্পরার ফয়সালা—বাংলা-বিহার আজ থেকে বাদশাহ আকবরের অধিকার। সে অধিকার ফলানোর জন্য এখন শুধু দখল দেওয়া বাকি! নদী-চর-খাল-বিল আর জলা-জঙ্গলে জড়ানো এই বাংলার দখল নেওয়ার একমাত্র উপায় হলো নৌকা।
তাই শত শত রণকোষা আর জাহাজ সাজিয়ে হাজির হলো সুবিশাল নৌবহর—মুঘলদের ‘বাদশাহি নাওয়ারা’। সুলতান স্বেচ্ছায় দাবি ছেড়ে দেওয়ায় দখলের কাজটা হওয়ার কথা ছিল রীতিমতো জলবৎ তরলং! কিন্তু নাওয়ারার প্রধান সেনাপতি ‘মির বহর’ শাহ বরদি শীঘ্রই টের পেলেন, বাংলার জল-হাওয়া আর যাই হোক, সরল-সোজা কোনো বস্তু নয়। গভীর ব্রহ্মপুত্রের কালচে সবুজ জলে সে বিশাল সাম্রাজ্যবাদী নাওয়ারার পথ আটকে দাঁড়ালেন সরাইল পরগনার ক্ষুদ্র জমিদার। শুরু হলো অসমসাহসী সেই বাঙালি ভূঁইয়ার উত্থান। জন্ম নিল এমন এক কিংবদন্তি, যার সামনে ম্লান হয়ে যায় রূপকথার হাজারো ডালিমকুমার। নাম তার ঈশা খাঁ। লোকে ডাকত মসনদ-ই-আলা। আর সেই গল্প সাজিয়ে নিয়েই উপন্যাসের প্রথম কিস্তি, এক যে ছিল বাঙ্গালাহ-১—ঈশা খাঁ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ মহাবিদ্রোহ নামে স্থান পেয়েছে। সে সময় অসংখ্য নাম-পরিচয়হীন সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে শক্তিশালী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে শামিল হয়েছিল—সে স্মৃতি আজও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের অধিবাসীদের মনকে নাড়া দেয়। আত্মত্যাগ, বীরত্ব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চিরকালই সম্ভ্রম আদায় করে এসেছে। তাই ১৮৫৭ সালের বিপ্লবীদের সম্পর্কে উপমহাদেশবাসীর এই শ্রদ্ধাভাব অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া, উপমহাদেশব্যাপী অভূতপূর্ব এই উথালপাথালের দ্বিতীয় কোনো নজিরও ভারতের পরবর্তীকালের ইতিহাসে খুব একটা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ওই বছরের ঘটনাবলি ঐতিহাসিকদেরও অনেক ভাবিয়েছে আর এখনো ভাবায়।
- নাম : খিলজি শাসন, ঈশা খাঁ, ১৮৫৭ সিপাহি বিপ্লবের ইতিবৃত্ত (৩টি বই একত্রে)
- লেখক: মুহাম্মাদ হাসিবুল হাসান
- লেখক: মহিম জোবায়ের
- লেখক: হুসাইন আহমাদ খান
- প্রকাশনী: : বাতায়ন পাবলিকেশন
- ভাষা : bangla
- প্রথম প্রকাশ: 2024