চোখের বালি
আমার সাহিত্যের পথযাত্রা পূর্বাপর অনুসরণ করে দেখলে ধরা পড়বে যে চোখের বালি' উপন্যাসটা আকস্মিক, কেবল আমার মধ্যে নয়, সেদিনকার বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে। বাইরে থেকে কোন্ ইশারা এসেছিল আমার মনে, সে প্রশ্নটা দুরূহ। সবচেয়ে সহজ জবাব হচ্ছে। ধারাবাহিক লম্বা গল্পের উপর মাসিক পত্রের চিরকেলে দাবি নিয়ে।
বহুদর্শনের নবপর্যায় বের করলেন শ্রীশচন্দ্র। আমার নাম যােজনা করা হল, তাতে আমার প্রসন্ন মনের সমর্থন ছিল না। কোনাে পূর্বতন খ্যাতির উত্তরাধিকার গ্রহণ করা সংকটের অবস্থা আমার মনে এ সম্বন্ধে যথেষ্ট সংকোচ ছিল। কিন্তু, আমার মনে উপরােধ-অনুরােধের দ্বন্দ্ব যেখানেই ঘটেছে সেখানে প্রায়ই আমি জয়লাভ করতে পারিনি, এবারেও তাই হল। আমরা একদা বঙ্গদর্শনে বিষবৃক্ষ উপন্যাসের রস সম্ভোগ করেছি। তখনকার দিনে সে রস ছিল নতুন।
পরে সেই বঙ্গদর্শনকে নবপর্যায়ে টেনে আনা যেতে পারে, কিন্তু সেই প্রথম পালার পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। সেদিনের আসর ভেঙে গেছে, নতুন সম্পাদককে রাস্তার মােড় ফেরাতেই হবে। সহসম্পাদক শৈলেশের বিশ্বাস ছিল, আমি এই মাসিকের বর্ষব্যাপী ভােজে গল্পের পুরাে পরিমাণ জোগান দিতে পারি। অতএব কোমার বাঁধতে হবে আমাকে। এ যেন মাসিকের দেওয়ানি আইন অনুসারে সম্পাদকের কাছ থেকে উপযুক্ত খােরপপাশের দাবি করা। বস্তুত, ফরমাশ এসেছিল বাইরে থেকে। এর পূর্বে মহাকায় গল্প-সৃষ্টিতে হাত দিইনি। ছােটো গল্পের উল্কাবৃষ্টি করেছি। ঠিক করতে হল, এবারকার গল্প বানাতে হবে এ যুগের কারখানাঘরে। শয়তানের হাতে বিষবৃক্ষের চাষ তখনাে হত, এখনাে হয়; তবে কিনা তার ক্ষেত্র আরাদা, অন্তত গল্পের এলাকার মধ্যে। এখনকার ছবি খুব স্পষ্ট, সাজসজ্জায় অলংকারে তাকে আচ্ছন্ন করলে তাকে ঝাপসা করে দেওয়া হয়, তার আধুনিক স্বভাব হয় নষ্ট।
তাই গল্পের আবদার যখন এড়াতে পারলুম না তখন নামতে হল মনের সংসারের সেই কারখানাঘরে যেখানে আগুনের জ্বলুনি হাতুড়ির পিটুনি থেকে দৃঢ় ধাতুর মূর্তি জেগে উঠতে থাকে। মানব-বিধাতার এই নির্মম সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার বিবরণ তার পূর্বে গল্প অবলম্বন করে বাংলা ভাষায় আর প্রকাশ পায়নি। তার পরে ঐ পর্দার বাইরেকার সদর রাস্তাতেই ক্রমে ক্রমে দেখা দিয়েছে গােরা, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ। শুধু তাই নয়, ছােটো গল্পের পরিকল্পনায় আমার লেখনী সংসারের রূঢ় স্পর্শ এড়িয়ে যায়নি। নষ্টনীড় বা শাস্তি, এরা নির্মম সাহিত্যের পর্যায়েই পড়বে। তারপরে পলাতকার কবিতাগুলির মধ্যেও সংসারের সঙ্গে সেই মােকাবিলার আলাপ চলেছে।
- নাম : চোখের বালি
- লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- প্রকাশনী: : আপন প্রকাশ
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 192
- ভাষা : bangla
- ISBN : 9789849079026
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2016





