
উন্মাদ আশ্রম
সৌভাগ্য এক সোনার হরিণ। যার কাছে ধরা দেয় তাকে একেবারে সোনায় সোহাগা করে রাখে। আর যার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার দিকে ভুলেও আর চায় না। ভাগ্যের অন্বেষণে এসে কত পথিক হারিয়ে যায়, খসে যায় জুতোর তলা, কেউবা আবার নিজেকে দুর্ভাগ্যের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়।
চলছে যেমন চলুক না! শুকিয়ে যাওয়া খোড়া এক পা নিয়ে জহিরের দুর্গতির শেষ নেই। বাপকে হারিয়েছে ম রণব্যাধিতে। স্বামী হারানোর শোকে কিংবা স্বামীকে সুস্থ করার তাগিদে নিজের জেবর বিক্রির হতাশায় তিনিও দেহ রাখেন। এরপর জগতে আর কীসের বাঁধা? জহির পৈতৃক সম্পত্তির ভাগটুকু নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে আসে ঢাকায়। কিন্তু নিজের শারীরিক বিকলাঙ্গতা তাকে এগিয়ে যেতে দেয় না। মমতা, করুণার চোখ পেলেও কেন যেন পায়না চাকরি। নারীরা তাকে প্রেমের চোখে দেখে না। ঐ একটু করুণা করে। একটা পায়ের জন্য সে স্বীকৃতি পায় না। তবুও অনেক কষ্ট করে একটা গতি যাও করতে পেরেছিল সেখানে শুধুই পেলো শুভঙ্করের ফাঁকি। ধোঁকা খেয়ে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে গেল। জীবনের এই চরম পরিহাসে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মানুষ জীবন থেকে শিখে, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। জহিরও নিলো। ঠেকে শিখলো তবে এককালের শিকার এখন নিজেকে ঘাঘু শিকারিতে রূপান্তর করলো। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সে নিজের ব্যাগ ভর্তি করলো। কারো চোখের পানি, দুঃখ, দারিদ্র্য কোনো কিছুতেই তাকে পেতো না। বিবেককে সে কড়া ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে চুপটি করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। ঘুমন্ত বিবেক তাই দেখলো না কারো সন্তানের আহাজারি, কারো কন্যার বিয়ের কথা, প্রেমের ফাঁদে লুট হয়ে যাওয়া এক নারীর বিশ্বাসের ভাঙন। এরপরই সে দেখা পেলো কাদের নামক একজনের। যার চরিত্রও বর্তমানে জহিরের মতোই। দুজনে বেশ ভাব হলো। চুনোপুটি ধরে ব্যাগ ভারী করে চলতে থাকে। কখনো আবার চায় একটা হাতি বাগিয়ে ফেলতে। কত স্বপ্ন দেখে কাদের।
জহির সে স্বপ্নে সেভাবে সাড়া দেয়না। চলুক না! তবে কাদেরের ঘ্যান ঘ্যানে একদিন জহিরেরও মত বদলালো। করা যায় এবার হাতি শিকার। পরিকল্পনা সব হয়ে গেল। এখন কাজে লাগানোর অপেক্ষা। আপন ঘরটায় বসে পান করতে করতে কাদের আর জহির নরম মাংসের কথা ভাবে। এরপর কী হলো? আধো ঘুম, আধো জাগনায় নাকি স্বপ্নে পৌঁছে গেল সে। কাদেরের পরিণতি এমনটাই কি সত্যি? কোথায় আছে সে? এই কথা বলা কাক কোত্থেকে এলো? নিঃসঙ্গ এই দুনিয়ায় ❛ভ্রমর❜ নামী এই কাকই তার বন্ধু। কিন্তু কাক এতকিছু জানে কী করে?
পলেস্তরা খসা পুরোনো আমলের চ্যাডউইকের বাড়িতে সে পৌঁছুলো কেমন করে জানেনা। অর্ধনগ্ন, নগ্ন, শিল্পী, আঁকিয়ে এত গুণের অধিকারী ব্যক্তিরা এই বাড়িতে একত্র হলো কীভাবে জহির জানে না। এরা সবাই একেক কিসিমের পা গল। তবে কি জহিরও এমন উ ন্মাদ হয়ে যাচ্ছে?
নাহয় কথা বলা কাক কেমনে দেখে? জীবনের একটা ছোটো হাইলাইট দেখে সে। নিজের করা পাপ, অন্যায় আর লোক ঠকানোর স্মৃতিগুলো যেন একের পর এক ভেসে আসে। অনুশোচনা হয়, দুঃখ হয় সেই সাথে সবুজ হয় কাকের পালক। কোথায় আছে সে?
- নাম : উন্মাদ আশ্রম
- লেখক: ওবায়েদ হক
- প্রকাশনী: : ৫২ (বায়ান্ন)
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 112
- ভাষা : bangla
- ISBN : 9789849969662
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2025