
কাদা মাটির সাতকাহন
দেশটা এতদিন তলিয়ে ছিল অথৈ পানির নিচে। সেই বৈশাখের শেষে কোথেকে কী করে পানি ছুটে আসে প্রত্যেক বছর। পয়লা পয়লা কিছুটা স্রোত দেখা যায়। স্রোতটা আসে পূর্ব দিক থেকেই। মাঠ ময়দানের দূর্বা, তুলসী, ছন প্রভৃতি দেখতে দেখতে ডুবে যেতে থাকে। তারপর আর স্রোত দেখা যায় না, নিচ থেকে পানি যেন জাল দেয়া দুধের মতো ফুলে ফেঁপে উঠে দেশটাকে নিজের বুকের ভেতর লুকিয়ে ফেলেছে। দূরে দূরে হাওড়ের পাড়ে পাড়ে কালো কালো রেখার গ্রামগুলো ভেসে থাকে। যতদূর দেখা যায় শুধু পানি আর পানি।
আসমানের কিনারা যেন সে পানি ধুয়ে বঝকঝকে তকতকে করে যায়। রোজ দু-একটা হিজল, বরুন বা শেওড়া গাছ যে এখানে ওখানে মাথা গজিয়ে না রাখে তেমন নয়। এই অথৈ পানি শাওন ভাদ্র মাসে কখনো দিনের পর দিন আঁধার হয়ে বৃষ্টিতে, কখনো তুফানের তাড়া খেয়ে খেয়ে চেটে ভেঙে ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়া ঢেউয়ের সাদা ফেনা দেখে মনে হয় যেন লাখো লাখো ধবল বক গড়াগড়ি খাচ্ছে হাওড়ে। কিন্তু সব সময়ই এমন যায় না।
আশ্বিনের শুরু থেকে বৃষ্টি কেঁদেকেটে চোখের পানি শেষ করে কোথায় যেন চলে যায়। আর তুফানও ক্রমাগত ফোঁস ফাঁস করতে করতে হাফিয়ে ওঠে। এতদিন যাকে তাড়াতে চেয়েছে তারই সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। সকাল বিকাল তাকে আদর করে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে যায়।