স্ত্রীরপত্র ও পয়লা নম্বর
আজ পনেরাে বছর আমাদের বিবাহ হয়েছে, আজ পর্যন্ত তােমাকে চিঠি লিখিনি। চিরদিন কাছেই পড়ে আছি-মুখের কথা অনেক শুনেছ, চিঠি লেখবার মতাে ফাঁকটুকু পাওয়া যায় নি। আজ আমি এসেছি তীর্থ করতে শ্রীক্ষেত্রে, তুমি আছ তােমার আপিসের কাজে। শামুকের সঙ্গে খােলসের যে সম্বন্ধ কলকাতার সঙ্গে তােমার তাই, সে তােমার দেহ-মনের সঙ্গে এঁটে গিয়েছে। তাই তুমি আপিসে ছুটির দরখাস্ত করলে না। বিধাতার তাই অভিপ্রায় ছিল; তিনি আমার ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করেছেন।
আমি তােমাদের মেজোবউ। আজ পনেরাে বছরের পরে এই সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে জানতে পেরেছি, আমার জগৎ এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে আমার অন্য সম্বন্ধও আছে। তাই আজ সাহস করে এই চিঠিখানি লিখছি, এ তােমাদের মেজোবউয়ের চিঠি নয়। তােমাদের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ কপালে যিনি লিখেছিলেন তিনি ছাড়া যখন সেই সম্ভাবনার কথা আর কেউ জানত না, সেই শিশুবয়সে আমি আর আমার ভাই একসঙ্গেই সান্নিপাতিক জ্বরে পড়ি। আমার ভাইটি মারা গেল, আমি বেঁচে উঠলুম। পাড়ার সব মেয়েরাই বলতে লাগল, “মৃণাল মেয়ে কি , তাই ও বাঁচল, বেটাছেলে হলে কি আর রক্ষা পেত।
” চুরিবিদ্যাতে যম পাকা, দামি জিনিসের পরেই তার লােভ। | আমার মরণ নেই। সেই কথাটাই ভালাে করে বুঝিয়ে বলবার জন্যে এই চিঠিখানি লিখতে বসেছি। | যেদিন তােমাদের দূরসম্পর্কের মামা তােমার বন্ধু নীরদকে নিয়ে কনে দেখতে এলেন তখন আমার বয়স বারাে। দুর্গম পাড়াগাঁয়ে আমাদের বাড়ি, সেখানে দিনের বেলায় শেয়াল ডাকে। স্টেশন থেকে সাত ক্রোশ শ্যাা গাড়িতে এসে বাকি তিন মাইল কাঁচা রাস্তায় পাকি করে তবে আমাদের গায়ে পৌছানাে যায়। সেদিন তােমাদের কী হয়রানি। তার উপরে আমাদের বাঙাল দেশের রান্না?সেই রান্নার প্রহসন আজও মামা ভােলেন নি।
- নাম : স্ত্রীরপত্র ও পয়লা নম্বর
- লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- প্রকাশনী: : আপন প্রকাশ
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 48
- ভাষা : bangla
- ISBN : 9789849149189
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2018





