
শেষ নেকড়ে
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের ছোট উপন্যাস ‘The Last Wolf’ বা ‘শেষ নেকড়ে’ এক অদ্ভুত এবং গভীর দার্শনিক গল্প। এই নভেলার কেন্দ্রে আছেন একজন ব্যর্থ দার্শনিক ও অধ্যাপক। স্পেনের এক্সট্রামাদুরা অঞ্চলের শেষ নেকড়ের কাহিনি লেখার দায়িত্ব পান তিনি। অধ্যাপক নিজেই দ্বিধা ও অস্তিত্বসংকটে জর্জরিত ও বিভ্রান্ত। বহু আগেই তিনি দার্শনিক চিন্তার মাধ্যমে পৃথিবীকে বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কিছু লিখতে হবে ভেবে তিনি কাঁপতে থাকেন, ভয়ে থাকেন ধরা পড়ে যাবেন, প্রকাশ হয়ে যাবে তিনি আসলে প্রতারক, ভেতরে এক ফাঁপা মানুষ।পুরো কাহিনি তিনি শোনাচ্ছেন বারে বসে বিরক্ত, উদাসীন ও অমনোযোগী এক বারটেন্ডারকে। গভীর দার্শনিক প্রশ্ন বা সভ্যতার সংকট নিয়ে মানুষ যে আসলে কতটা উদাসীন তারই প্রতীক যেন এই বারটেন্ডার।
বিরামহীন বলে যাচ্ছেন অধ্যাপক, যেন অনন্ত এক বাক্য। নভেলায় অধ্যাপক যে অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন তা শুধু নেকড়ের মৃত্যু বা বিলুপ্তির কাহিনি নয়, বরং মানবসভ্যতার ক্লান্তি, অর্থহীনতা এবং ধ্বংসের দিকেও ইঙ্গিত করে। উপন্যাসের নেকড়েটি কেবল একটি প্রাণী নয়, বরং পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া বন্যতা, প্রকৃতির ক্ষয় এবং মানুষের সভ্যতার বিনাশের প্রতীক।গোটা কাহিনিতে এক ধরনের গাঢ় ক্লান্তি ও অবসাদ আছে। যেন পৃথিবী আর কিছু বোঝার বা ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। উপন্যাসের নেকড়েটি মানবসভ্যতার বিনাশী ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে—আমরা একদিন হয়তো অর্থহীনতা ও ধ্বংসের একই ভাগ্যে পৌঁছাব। পুরো নভেলাটি একটি দীর্ঘ বাক্যে লেখা, যা পাঠকের মধ্যে এক ধরনের দমবন্ধ করা অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এই শৈলী নিজেই অধ্যাপকের ভেতরের অনিশ্চয়তা ও শ্বাসরুদ্ধ অস্তিত্বকে প্রতিফলিত করে। হয়তো এই অসহায়, ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া প্রাণীগুলির গল্পে তিনি খুঁজে পান নিজেরই প্রতিচ্ছবি—সময়কে টিকিয়ে রাখতে না পারা, ধীরে ধীরে ভেসে যাওয়া এক জীবনের রূপক।
- নাম : শেষ নেকড়ে
- অনুবাদক: হামীম কামরুল হক
- প্রকাশনী: : উজান প্রকাশন
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 80
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : paperback
- প্রথম প্রকাশ: 2025