
কিছু স্মৃতি কিছু কথা
ভূমিকা১৯৭৯ সালের কোনো একদিন পত্রিকায় একটি সংবাদ দেখেলাম তাতে লেখা ছিল বিজ্ঞান জাদুঘর টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনিগ্রহ পর্যবেক্ষণের আয়োজন করেছে। তখন পর্যন্ত আমি টেলিস্কোপ দেখিনি, আর শনি গ্রহের বলয়ও দেখিনি। ফলে নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত হলাম- পর্যবেক্ষনের স্থলে। সে সময় বিজ্ঞান জাদুঘরের অফিস ছিল ধানমন্ডির ৬ নং রোডের একটি ছোট বাড়িতে। শনিগ্রহ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করাহয়েছিল এর ছাদের উপর।
দেখলাম উই .এন .ডি.পির একজন আমরিকান ভদ্রলোক ৪ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট টেলিস্কোপ নিয়ে শনিগ্রহ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা করেছে। আর সেখানে ১৫/২০ জন আকাশ প্রেমিক মানুষের উপস্থিতি। ভদ্রলোকের নাম মনে নেই, তবে তিনি খুব মিশুক তা বোঝা গেল সামান্য একটু কথাবার্তার পর। সেখানে অন্য কোনো মানুষ তাকে তেমন প্রশ্ন করছে না, যেমনটি আমি করেছিলাম, ফলে তাঁর সঙ্গে অল্পক্ষণের মধ্যেই সম্পর্ক জমে উঠলো। তিনি শুধু শনি গ্রহই নয় , সেই সময় আকাশে শুক্র গ্রহ ও অন্যান্য কিছু উজ্জল গ্রহ ও তারা ছিল তা টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখালেণ।
পর্যবেক্ষণ শেষে যখন আমি বাসার দিকে ফিরে যাচ্ছিলাম তখন বিজ্ঞান জাদুঘরের তৎকালীন পরিচালক ড. কে. এম সিরাজুল ইসলাম সাহেব আমাকে তাঁর সঙ্গে কিছু আলাপ করার জন্য আমার সঙ্গে ইউ.এন.ডি.পির ভদ্রলোকের এতক্ষণের আলাপ আলোচনায় তাঁর ধারণা হয়েছিল আমি হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে অভিজ্ঞ। তিনি আমাকে জানালেন যে , ঐ টেলিস্কোপটি তিনি কিনবেন এবং আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য আমি সময় দিতে পারবে কী না? আমি এমনই একটি সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলাম; বললাম হ্যাঁ পারবো। তখনই তিনি আকাশ পর্যবেক্ষণের একটি টিম তৈরি করলেন যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করবেন।
এঁরা হলেন সেই সময়কার বিজ্ঞান জাদুঘরের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও ফরহাদ হোসেন, শুরু হলো আকাশ পর্যবেক্ষনের এক নতুন দিগন্ত। তাঁর কর্ম জীবনের উল্লেখযেগ্য ঘটনা হচ্ছে: ১. সরকারি আযিযুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্বনির্ভর আন্দোলন ২. দূরশিক্ষণে বি. এড এর মাধ্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু। ৩. জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর স্থাপন। ৪. ব্যাপক মিডিয়া আন্দোলন শুরু। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে ড. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল এবং আজ অবধি তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তেমনি অটুট রয়েছে। তিনি একজন অসাধারণ সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব এবং বিজ্ঞান জাদুঘরের একটি আকর্ষনীয় ও শিক্ষনীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন এবং বিজ্ঞান জাদুঘরে উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনীবস্তু গুলো তাঁর সময় হয়েছে । তবে ড. সিরাজুল ইসলামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো- জ্যোতির্বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতা করা। তিনি জাদুঘরে প্রথম টেলিস্কোপ ,মিনি প্ল্যাটরিয়মি, সেলেসসিয়াল গ্লোব, স্কাই চার্ট, বই পুস্তক, মিনি অবজারভেটরি নির্মান থেকে শুরু করে “ বাংলাদেশ -এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি” প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৮৪ সনে তাঁরই অফিসে এর প্রতিষ্ঠা যাত্রা শুরু হয়। শুধু তাই নয় এ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পাথরের টুকরো বিজ্ঞান জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও তিনিই করেছিলেন। অত্যন্ত নম্র , ভদ্র আর বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ড. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করণের জন্য তাঁর অনন্য অবদান হয়তো এই মুহূর্তে অনেকেরই অজানা তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন তাঁর অবদান কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। স্মরণ করবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়া পত্তনের কথা। এফ.আর সরকার সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি
- নাম : কিছু স্মৃতি কিছু কথা
- লেখক: ড. খান মোঃ সিরাজুল ইসলাম
- প্রকাশনী: : তাম্রলিপি
- ভাষা : bangla