Somrajjer trash (সাম্রাজ্যের ত্রাস)

সাম্রাজ্যের ত্রাস

অনুবাদক:  ইরফান সাদিক
অনুবাদক:  নাঈমুর রহমান
প্রকাশনী:  ইঙ্কলাইট
৳340.00
|| প্রাককথন ||
আগস্ট ২৩, ২০১০। এই দিনে আমেরিকার বিরুদ্ধে উসামা বিন লাদেনের যুদ্ধ ঘোষণার বরাবর ১৫ বছর পার হলো। প্রথমবার দেওয়া ঘোষণার পর ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বিতীয়বার একই ঘোষণা দেন। সেটা যেন ছিল আমাদের চোখ না এড়ানোর জন্যই। আর সেই ঘটনার পর থেকে আমেরিকানরা এই ব্যক্তি, তাঁর সংগঠন আল-কায়েদা এবং সমমনা ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে অসংখ্যবার শুনেছে, পড়েছে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন মানসিকতার রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, তত্ত্ববিদ কিংবা সমাজবিজ্ঞানী; রেডিও, প্রেস কিংবা টিভি বিশেষজ্ঞ সবার কাছ থেকেই হয়তো কিছু না কিছু শোনা হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন এডমিরাল, জেনারেল, পশ্চিমা কিংবা কট্টরপন্থী মুসলিম, দক্ষ কিংবা শুয়ে-বসে থাকা মনোবিজ্ঞানী, যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ - কেই বা বাদ ছিল? আর এতসব বয়ান আর উপদেশে সুসজ্জিত হয়ে আমেরিকানরা যুদ্ধ করতে রওনা হয়েছিল - তাও কিনা আবার দুই পক্ষের নেতৃত্বেই (রিপাব্লিকান এবং ডেমোক্রেট)।
কিন্তু এরপর থেকে সম্ভাব্য সমস্ত ক্ষেত্রেই আমেরিকা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের ইসলামপন্থী শত্রুরা হেরে যায়নি, তাদের সমৃদ্ধিও বন্ধ হয়নি। আর আমার দৃষ্টিতে এখনও আমেরিকা ব্যাপক আকারে অরক্ষিত অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে। আমি এই বইটিতে দেখাব, আল-কায়েদা আর তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সরকার আর তার ইউরোপীয় মিত্রদের অনুসৃত যুদ্ধকৌশল কীভাবে উল্টো ইসলামপন্থীদের বিজয়েই সহায়ক হয়ে উঠেছে। তাদের ভাষায় সেটা হলো উসামা বিন লাদেনের সেই তিন উদ্দেশ্য অর্জন, যেগুলো তিনি তার মূল বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন – . ১. আমেরিকাকে তিলে তিলে দেউলিয়া করে দেওয়া; ২. আমেরিকার সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীকে এমন পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া, যা তাদের প্রতিরক্ষা এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে দুর্বল করে দিবে; ৩. আমেরিকার মিত্রদেরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে আমেরিকাকে যথাসম্ভব বিভক্ত করে দেওয়া।
আরও খারাপ হয়েছিল, যখন ওয়াশিংটন আর তার ইউরোপীয় মিত্ররা তাদের সমস্ত বিবৃতি-বক্তব্য থেকে ‘ইসলামি’, ‘ইসলামপন্থী’ এবং ‘জিহাদ’ শব্দগুলো বাদ দিয়ে এগুলোর পরিবর্তে আরও ঘোলাটে সব শব্দ ‘চরমপন্থী’ বা ‘কট্টরপন্থী’ ইত্যাদির প্রচলন করেছিল। ২০১০ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টের (আমেরিকান মিলিটারির ট্রেইনিং ক্যাম্প) গ্র্যাজুয়েশন বক্তব্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ওবামা ওইসমস্ত শব্দগুলো ব্যবহার করেননি। তিনি উসামা বিন লাদেনের কথাও উল্লেখ করেননি। আর যখন আল-কায়েদার কথা উল্লেখ করলেন, তাও এমনভাবে করলেন যেন তা এক ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা বিলুপ্তপ্রায় সংগঠন। ওবামা বলেছিলেন, “আল-কায়েদা আর তার সহযোগিরা হলো ইতিহাসের ভুল দিকের পুঁচকে সব মানুষ।” আসলে তিনি জর্জ ডব্লিউ বুশ আর বিল ক্লিনটনের সাথে সাদৃশ্য রেখেই বলেছিলেন, “তারা কোনো জাতির নেতৃত্ব দেয় না। কোনো ধর্মের নেতৃত্ব দেয় না।”
অথচ বাস্তবতা হলো, আমেরিকার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছে, তারা মুসলিম – আর নিষ্ঠার সাথেই তারা এবং তাদের ক্রমবর্ধমান ভাইয়েরা বিশ্বাস করে যে তারা আত্মরক্ষামূলক জিহাদের মাধ্যমে ইসলামকে এবং তাদের ভূমিকে রক্ষা করছে, যেমনটি আল্লাহ ও নবি মুহাম্মাদ ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন। এইসব ব্যাপার অস্বীকার করে আমেরিকান এবং ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ ভোটারদের সাথে প্রতারণা করে, এবং সেই জনগণকেই অসন্তুষ্ট করে বসে যাদের প্রতি তারা কিনা সংবেদনশীলতা দেখাতে চায়। অথচ বেশিরভাগ মুসলিম এটাই জানেন যে, ২০০৩-এ আমেরিকার ইরাক আগ্রাসনের পর থেকে উসামা বিন লাদেন, আল-কায়েদা এবং তাদের মিত্ররা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ রক্ষণাত্মক জিহাদ পরিচালনা করছে।
কিন্তু পশ্চিমা নেতারা একমাত্র যে পন্থায় নিজেদের গর্হিত প্রতারণাকে বজায় রাখে, সেটা হলো ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা বলা। আর বলাই বাহুল্য, এই কাজে তারা ভালই পটু। ‘ওবামা কেন আমেরিকার ইসলামপন্থী শত্রুদের স্পষ্ট নামোল্লেখ নিষেধ করেছিল?’ হয়তো এমনই প্রশ্ন এড়াতে ওবামার সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা জন ব্রেনান (John Brennan) বলেছিলেন, “আমরা আমাদের শত্রুকে ‘জিহাদি’ কিংবা ‘ইসলামপন্থী’ হিসেবে বর্ণনা করি না। কেননা, জিহাদ হলো (মুসলিমদের) পবিত্র সংগ্রাম যা নিজেকে বা নিজের সম্প্রদায়কে পরিশুদ্ধ করার জন্য করা হয়ে থাকে (নফসের জিহাদ)।” অথচ কথাগুলো মিথ্যা। আর তার চেয়েও বাজে ব্যাপার হলো - এসব কথাবার্তা জনগণকে বিভ্রান্ত করে।
১৯৯৬ সালের পর, বিশেষত আল-কায়েদার ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর হামলার পর থেকে আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা এবং পেশাদার পরামর্শদাতারা সফলভাবে যে শত্রুকে চিহ্নিত করেছেন; দুঃখজনক হলো – সেই ধরনের কোনো শত্রুর অস্তিত্বই নেই। কেননা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, আল-কায়েদা হলো কিছু মাথানষ্টদের নেতৃত্বে পরিচালিত যতসব দুর্বৃত্তদের এক সংগঠন; ৯/১১-এর হামলা হলো স্রেফ এক নৃশংসতা; বিন লাদেনের বক্তব্যগুলো স্রেফ কিছু ফালতু আলাপ – সেগুলো কোনো প্রকার চিন্তা বা বিশ্লেষণের যোগ্যতাই রাখে না; আর ইসলামপন্থীরা হলো ধ্বংসবাদী বা (পশ্চিমা) স্বাধীনতার ঘৃণাকারী, অথবা বার্নার্ড লুইসের (Bernard Lewis) মতো তারা বিশ্বাস করে যে – তাদের সমস্ত দুর্দশার জন্য পশ্চিমই দায়ী।
এর ওপর আমেরিকানরা শুনে এসেছে যে, আল-কায়েদা আর তার মিত্রদের ‘অবশিষ্টাংশও’ একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, তাদের সংখ্যাও একেবারে কমে গিয়েছে; আর রীতিমতো অলৌকিকভাবে তাদের গুটি কয়েকজন মিলে যে দেড়শো কোটি মুসলিমের বিশ্বাসকে নিজেদের আদর্শে রূপ দিতে সমর্থ হয়েছে, মূলধারার ইসলামের সাথে সেটার নাকি কোনোই সম্পর্ক নেই। এছাড়া পশ্চিম আরও জেনে এসেছে যে, আল-কায়েদা ও তার মিত্রদের লক্ষ্য নাকি সমস্ত খ্রিস্টান এবং ইহুদিদেরকে হত্যা করা। কিন্তু এটা হলো এমন এক শত্রুর চিত্রায়ন, যার অস্তিত্বই নেই। উল্টোদিকে, বাস্তব দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে গড়া এই কাহিনীর সত্যিকার সংস্করণটি সামনের অধ্যায়গুলোতেই আসছে। নিঃসন্দেহে তা পাঠকদের সামনে উন্মোচিত হবে পাল্টা প্রতিবেদন কিংবা বিকল্প ইতিহাস হিসেবে।
এমনকি স্বয়ং উসামা বিন লাদেনের ব্যাপারেও, আমেরিকানদের অনর্গল বলা হয়েছিল তিনি এই, তিনি সেই। কিন্তু সেসবের কোনো চিত্রায়নেই তাঁর ধর্মনিষ্ঠা, উদারতা, সাহসিকতা, কৌশলগত দক্ষতা, ক্যারিশমা এবং সবরকে দেখানো হয়নি। বরং সবসময়ই জোর গলায় বলা হয়েছে – তিনি নাকি একজন উন্মত্ত উচ্চাভিলাষী, রক্তপিপাসু, অযৌক্তিক, সীমিত বুদ্ধিমত্তার মেসিয়ানিক ব্যক্তি। এমন একজন, যে নাকি ভয়ঙ্কর খুনে কূটবুদ্ধির সহযোগী আইমান আজ-জাওয়াহিরি এবং অন্যান্য মিশরীয় ইসলামপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত; যে নাকি বেঁচে আছে কেবল ইহুদি ও খ্রিস্টান হত্যার আহ্বান জানাতেই। আমেরিকা সত্যিই এমন কোনো শত্রুর মুখোমুখি হলে তা বরং সৌভাগ্যই হতো। কিন্তু না, আমরা আদৌ এমন কারও মুখোমুখি নই। উসামা বিন লাদেন এমন ব্যক্তিত্ব নন, যেমনটা আমরা নিজেরা তাঁকে এঁকেছি। প্রকৃতপক্ষে, আমাকে যদি স্রেফ দশটি বৈশিষ্ট্যেও উসামা বিন লাদেনকে বর্ণনা করতে বলা হতো, তাহলে সেগুলো হতো: ধার্মিক, সাহসী, উদার, বুদ্ধিমান, ক্যারিশম্যাটিক, ধৈর্য্যশীল, স্বপ্নদর্শী, অদম্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সর্বোপরি একজন বাস্তববাদী। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি এক ধ্রুবসত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন; আর তা হলো – যুদ্ধগুলো কেবল বুদ্ধিমত্তার সাথে হত্যা করেই জেতা যায়। যারা দাবি করেন উসামা বিন লাদেন এক উন্মাদ, আর তাঁর সহযোগীরা কেবল সংখ্যায়ই কম নয় বরং তারা ‘প্রকৃত’ ইসলাম নিয়েও একেবারে মূর্খ পাগলাটে সব মানুষ, যারা দাবি করেন উসামা বিন লাদেন সমস্ত অমুসলিমদেরকে হত্যা করতে চায়, তাদের অবস্থা হলো এনলাইটেনমেন্টের আগের সময়কার পোপদের মতো। এই পোপরা বিশ্বাস করতো – ধ্রুপদী এথেন্স গড়ে উঠেছিল গণতান্ত্রিক, স্বাধীন জীবনযাপন সহিষ্ণু ও কলা-প্রেমী অ্যাথেন্সবাসীদের দিয়ে; আর বিপরীতে স্পার্টা পরিচালিত হতো কিছু সর্বগ্রাসী, বর্বরদের দ্বারা। অথচ যদিও স্পার্টার তুলনায় এথেন্সের ‘আধুনিক’ সমাজ এবং এক বিশাল সেনাবাহিনী ছিল, কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে যুদ্ধে স্পার্টাই জয়লাভ করেছিল। সত্য হলো, স্পার্টা আসলে সর্বগ্রাসী কিংবা বর্বর - কোনোটিই ছিল না। বরং স্পার্টানরা সেইসব যুদ্ধেই অংশ নিতো যেগুলো তাদের জন্য জেতা সহজ ছিল; আর ফলস্বরূপ তারা বিজয়ীও হতো। কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছা করা মাত্রই তারা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তো না।
একইভাবে, আমেরিকা আর তার ইউরোপীয় মিত্ররা আজকের যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে ‘উন্মাদ’ উসামা বিন লাদেন এবং তাঁর নগণ্য সব ইসলামি মিত্রদের কাছে। কারণ আমেরিকা কেবল তার নেতাদের মনের মধ্যে বসে থাকা এক অস্তিত্বহীন শত্রুকেই বারংবার আঁকছে। কিন্তু অন্যদিকে উসামা বিন লাদেন আর তাঁর সহকর্মীরা নিজেদের সুসংজ্ঞায়িত রেখা ধরেই জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে পশ্চিম নিজেদের ওপর যে বিভ্রান্তি টেনে এনেছে, তা জনস হপকিন্স ল্যাবরেটরির ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষণ’ বিভাগের মাইকেল ভ্লাহোস (Michael Vlahos) সংক্ষেপে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে ভ্লাহোস লিখেছিলেন, “তারা (ইসলামপন্থীরা) নিজেদের সম্পর্কে কী ভাবে, সেটা আমরা তাদের সম্বন্ধে কী ভাবি - তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে ইচ্ছেমতো ‘জঙ্গি’ ‘সন্ত্রাসী’ ইত্যাদি ডাকা স্রেফ আমাদের মনকেই শান্ত রাখে; কিন্তু এগুলো তাদের সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি বাড়ানোতে আদৌ সাহায্য করে না।”
উসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রে তাঁর পশ্চিমা তুলিতে আঁকা চিত্রায়নের চেয়ে আমি বরং সব ধরনের পূর্ব ধারণামুক্ত সত্যিকার কেইস স্টাডিতেই বেশি আগ্রহী। এই বইতে ‘ধ্বংসবাদী’, ‘গণহত্যাকারী’, ‘নাজি’, ‘নৃশংস’, ‘মেসেঞ্জিবাদী’, ‘ইসলামি ফ্যাসিস্ট’, ‘উন্মাদ’ কিংবা ‘অপরাধী’ – এসব ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা আখ্যাগুলো ব্যবহার করা হবে না কেননা এগুলো অপ্রযোজ্য। এই জাতীয় শব্দগুলো ক্ষতস্থানে মলম দেয়, নিজেদের অহংকার চেপে রাখে; এগুলো আমেরিকা আর তার মিত্রদেরকে আঘাত করা, লাঞ্ছিত করা এই লোকটির ব্যাপারে লিখা-বক্তব্য পেশকারীদের আবেগকেই কেবল সন্তুষ্ট করে। কিন্তু এসব আমাদেরকে সত্যিকার উসামা বিন লাদেনকে বুঝতে সাহায্য করে না; আর ফলস্বরূপ তাঁকে (এবং তাঁর মতো লোকদেরকে) হারাতেও সাহায্য করে না। তাই ঐসব আখ্যা দেওয়ার পরিবর্তে আমি মনোনিবেশ করবো সেইসব ব্যাপারে – যাকিছু উসামা বিন লাদেন নিজে বলেছেন এবং করেছেন, যাকিছু তাঁকে সবচেয়ে ভাল জানা মানুষগুলো বলেছেন। আমি আরও মনোনিবেশ করবো তাঁর কথা ও কাজ কীভাবে বিশ্বের সেই অংশে প্রতিফলিত হয়েছে, যে অংশ এক বিরাট সময় জুড়ে বিশ্বস্ত-ধর্মপ্রাণ নেতৃত্বের জন্য রীতিমতো মরিয়া হয়ে ছিল। আর এই ব্যাপারটা তো বহু শতাব্দী ধরে ইসলামি ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সময়ে সময়ে আমি আমার মূল্যায়নগুলো নিয়ে আলোচনা করব; সেগুলো কোন পর্যায়ের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়ায়, তা মেপে দেখবো। আর পরিশেষে – আমি বিশ্বাস রাখি যে আমার দলিল-প্রমাণ আর মূল্যায়নগুলো উসামা বিন লাদেনের আরও ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তব একটি চিত্র তুলে ধরবে।
স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমার উদ্দেশ্য উসামা বিন লাদেনের প্রশংসা করা নয়, বরং তাঁকে কবর দিতে সাহায্য করা। কিন্তু তা করার জন্য, আমাদের আগে ‘তিনি কে’ এবং ‘তিনি কী’ সে সম্পর্কে আন্তরিক মনের, স্পষ্ট দৃষ্টির মূল্যায়ন প্রয়োজন। কেননা যদিও এটা সত্য যে উসামা বিন লাদেন কোনো ইউনিফর্ম পরিধান করেন না, কিন্তু আমেরিকার নিরাপত্তা এমনকি টিকে থাকার জন্য ইতিহাসের যেকোনো শত্রু জেনারেলের চেয়েও তিনি বড় হুমকিস্বরূপ। ওয়াশিংটন তো এর আগে লর্ড হাওকে (Lord Howe) বোকা, অসচ্চরিত্র লোক হিসেবে দেখায়নি; গ্রান্টও (Grant) তো রবার্ট লি-কে (Robert Lee) উন্মাদ বলে উড়িয়ে দেননি; অনুরূপভাবে লি-ও গ্রান্টকে মাতাল বলে চালিয়ে দেননি। আইজেনহাওয়ারও (Eisenhower) কখনও ভাবেননি যে, উত্তর আফ্রিকায় রোমেলকে (Rommel) তিনি অপরাধী তকমা দিয়ে হারিয়ে দিতে পারবেন। বরং প্রত্যেকে তার প্রতিপক্ষের পদক্ষেপ বোঝার চেষ্টা করেছেন আর সে অনুসারেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। আর আজকে উসামা বিন লাদেনকে আমরা নিজেরা যেভাবে কল্পনা করতে পছন্দ করি তা সরিয়ে রেখে তিনি আসলেই যেমন ছিলেন, ঠিক তেমনটাই বুঝতে যাওয়ার অর্থ হলো কিছু অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হওয়া।
১৮৫২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্টে থাকাকালীন সময়ে রবার্ট লি তার ছেলে কাস্টিস লি-কে (Custis Lee) চিঠি লিখেছিলেন, “তুমি বাস্তবে যে জগতটায় বেঁচে আছো, সেখানেই থেকো। যে বিষয়টা যেমন, সেটাকে ঠিক সেভাবেই দেখো। আর সেগুলোরই সর্বোচ্চ ব্যবহার করো। কখনও ভেবো না যে তুমি নিজে যেটাকে যেভাবে চাও, সেটা ঠিক সেভাবেই হবে। বরং আশা রাখো যাতে সব ঠিকঠাক মতো হয়ে যায়। আর তারপর তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাও।”
উসামা বিন লাদেনকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত, তার জন্য এর চেয়ে ভাল উপদেশ আর হতে পারে না। তাই আসুন তাঁকে আমরা ঠিক সেভাবেই নিই, যেভাবে সত্যিই খুঁজে পাই। লেখক: মাইকেল শইয়ার

সঠিক মূল্য

সকল পণ্য তুলনামূলকভাবে বাজারের সমমূল্যে বা এর চেয়ে কম মূল্যে বিক্রয় করা হয়

ডেলিভারী

বাংলাদেশের যে-কোন প্রান্তে ২-৫ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়

নিরাপদ পেমেন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ

২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার

সার্বক্ষণিক কেনাকাটার জন্য সার্বক্ষণিক সহায়তা
পণ্যটি সফলভাবে কার্টে যুক্ত হয়েছে     কার্ট দেখুন