
খোলা জানালায় সমাচার
ন্যায়- অন্যায় বিচারে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি, হিতাহিত শক্তি, বিচার, বৈরাগ্য, বিবেচনা এগুলোই মূলত বিবেক। বিবেক একটি জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া যা কোন নৈতিক দর্শন বা মান পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে যুক্তিযুক্ত অনুষঙ্গকে আবেগ দ্বারা প্রকাশ করে। এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ায় নৈতিক দর্শনে একপ্রকার শাশ্বত চেতনা (বঃবৎহধষ পড়হংপরড়ঁংহবংং), শাশ্বত গতি (বঃবৎহধষ সড়ঃরড়হ) বা শাশ্বত দর্শন (বঃবৎহধষ ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যু) দ্বারা যখন ব্রাকেটবন্দি হয়ে উঠে তখন শাশ্বত (বহঃবৎহধষ) বিষয়টি তার বৃত্তের বাহিরে প্রকাশিত হবার দক্ষতা বা ক্ষমতা হারিয়ে প্রতিবন্ধী বিবেকে রূপান্তরিত হয়। যা আমরা মূলত বিবেকপ্রতিবন্ধী বলি। ৭১ পূর্ব আমরা পাকিস্তান ছিলাম এটাই ইতিহাসের সত্য। দুই প্রান্তের দুই ভূখণ্ড জড়িয়ে একটি দেশ তবে বর্ণ, সংস্কৃতি, দৈহিক আকার- আকৃতি কিংবা আচার- আচরণে এক রাষ্ট্র পাকিস্তানের ছিল না কোন মিল অথবা কোন প্রকার সংহতি।
কেবলমাত্র ধর্মটাই ছিল সংখ্যানুপাতে বেশি মিল। সেই ধর্মও মূলত রাষ্ট্রের জাতিসত্তার প্রশ্নে কোন প্রকার ভূমিকাও রাখতে সক্ষম হয়নি। অত্যাচার, অনাচার, জুলুমনীতি আর লুটরাজ ও অগণতান্ত্রিক শাসন এগুলোর বিপরীতে সেই ধর্মও বর্ম হয়ে সামনে দাঁড়ায়নি। উল্টো ধর্মকে বর্ম করে যুদ্ধকালীন ধর্মের অপব্যবহার হয়েছে চরম পর্যায়ে। ক্ষুদ্র ও ছোট জীবন অভিজ্ঞতার আলোকেই দেখেছি ধর্মকে বারবার, প্রতিবার সামনে এনেও রক্ষা হয়নি একতা। জানি অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিবে তবুও চরম সত্য হলো, ধর্ম (জবষরমরড়হ) কখনোই জাতিকে একত্রিত করতে পারে না বা করে না কেননা ধর্মের সত্তাটাই মূলত এমন। জাতিকে একত্রিত করে বা করতে পারে একমাত্র জাতিসত্তা (ঊঃযহরপরঃু)। সেই জাতিসত্তার প্রশ্নে এবং সর্বোপরি অধিকারের প্রশ্নেই অত্র অঞ্চলের জনমানুষেরা রুখে দাঁড়ায় পশ্চিম প্রান্তের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অতঃপর অনেক রক্ত আর সম্ভ্রম হারিয়ে, বিনিময়ে আজকে স্বাধীন বাংলাদেশ। যে দেশে একটি জাতিসত্তার ভিত্তিতে গড়ে উঠা একটি নির্দিষ্ট ভূমি, একটি নির্দিষ্ট লাল- সবুজ পতাকা এবং একটি কাঙ্খিত জাতি। বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডে নতুন করে ৭১ জানান দেয় বাংলাদেশ তার নাম রাষ্ট্র হিসেবে। সময়ের ঢেউয়ে আজ দেশটি তার তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে।
যুদ্ধে বিধ্বস্ত রাষ্ট্রটি ধ্বংসস্তূপের উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এতটি বছর পেরিয়ে এসেছে তবুও জনমানুষের হৃদয়ে প্রশ্ন ঘুরে বেরায়, আমরা সত্যিই কি সেই ৭১ এর চেতনাকে ধরে এগুতে পেরেছি কী? উত্তরটি সহজভাবে না হবে বটে। তবে একটি রাষ্ট্রের জন্ম এবং ধ্বংসস্তুপ এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সব হিসেব- নিকেষ কষে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব মিলাতে সত্যিই হীম সিম খেতে হয়। তবুও বলাই বাহুল্য যে, তিপ্পান্ন বছরের যতটুকু অর্জন হবার কথা ছিল, সেটা অপূর্ণ থাকলেও রাষ্ট্রটি একেবারেই যে খারাপ অবস্থানে আছে, তা কিন্ত মোটেও নয়। আক্ষেপটি মূলত বিগত তিপ্পান্ন বছরে আরও বহুগুণ সুযোগ ছিল অনেক বেশি অগ্রগতির। হ্যাঁ কঠিন সত্য হলো সেটা হয়নি। তবে এটাও সত্য যে, যেহেতু এটি একটি যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশ তাই সেই অপূর্ণতাও একদিন এবং অতি দ্রুতই পূর্ণ হতে বাধ্য হবে। তবে প্রশ্ন তবুও মনের কোণে ঘুরে, আদৌ কি সম্ভব? এবং কেমন করে সম্ভব?
প্রথম উত্তরটি না হবার কোন উপসর্গ নেই। দ্বিতীয় উত্তরটি রাজনৈতিক হয়ে সামনে আসে। লক্ষ্যণীয যে, বিশ্ব পরিমণ্ডলে হাতে গুণে দুই-চারটি রাষ্ট্র ব্যতিরেকে পুরো বিশ্ব পরিচালিত হয় রাজনীতি দ্বারা এবং এই যে রাজনীতি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, সেটা প্রথম ভাবনায় বলা যায় মঙ্গলজনক। হ্যা দুই চারটি দেশ এখনও রাজনীতির সাইনবোর্ডকে সামনে রেখেই এক নায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের মতন প্রভাবে চলছে। তবে সেই সব রাষ্ট্র বাস্তবিক অর্থেই কোন সঠিক পদ্ধতির রাষ্ট্র কিনা? সেই প্রশ্নটি থেকেই যায়। সেই সব রাষ্ট্রে না আছে গণতন্ত্রের ছোঁয়া, না আছে মানবাধিকারের ছোঁয়া কিংবা না আছে অধিকারের ছোঁয়া।
মানুষ মূলত স্বাধীন সত্তার জীব যেহেতু বিবেক বহন করে। সেই মানুষদের রাষ্ট্র রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হলেই কেবলমাত্র মানুষ সত্তা সম্মানিত হবার সুযোগ থাকে, নতুবা সব বিনষ্ট হয়। এটাও সত্য যে, সেই রাজনৈতিক চর্চাটাও একটি সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক হতেই হয়। কেননা আজ অবধি বিশ্বে গণতন্ত্রটাই সর্বজনীন গৃহীত ও সর্বোচ্চ পরীক্ষিত ও মর্ডান পদ্ধতি বলেই। বলাই বাহুল্য যে, যুদ্ধ পরবর্তি স্বাধীন বাংলাদেশে তিন তিনবার অঘটন ঘটে এবং রাজনীতির বাহিরে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা পরিচালিত হয়েছে অতঃপর বর্তমানেও অনাকাঙ্খিত হলেও চতুর্থবারের মতন একই পথে চলছে। প্রশ্ন উঠে ফলাফল কি পেয়েছে বাংলাদেশ এবং এই যে বর্তমানেও সেই অরাজনৈতিক পথেই চলছে, এটারই বা ভবিষ্যৎ কী? ভবিষ্যত কি সেটা লিখলে অনুমান নির্ভর হয়ে যাবে।
যদিও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই সেই অনুমান চলে আসবে। তবে বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে রাষ্ট্রটি বেশিরভাগ সময় রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দ্বারাই পরিচালিত হয়েছে। এই দেশের জনমানুষেরা বেশ অবগত আছেন যে, রাজনীতি দ্বারাও কাঙ্খিত সেই পথে দেশটি পরিচালিত হয়নি। পথভ্রষ্ট হয়েছে বারবার প্রতিবার। সেখানে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চর্চাটাই ছিল মোক্ষ কেবল স্বার্থের তরে। অপর পৃষ্ঠায় এটির ভোগান্তি জনমানুষেরা যতটা ভুগছে, রাষ্ট্র যতটা ভুগছে তারচেয়েও কিন্ত রাজনীতিবিদরাই সর্বোচ্চ বেশি ভুগেছে। হোক সেটা জেল-জুলুম বা অপমানের মধ্য দিয়ে। তবুও কোন এক অজানা স্বার্থের টানে বারবার রাজনৈতিক দলগুলো এবং রাজনীতিবিদরা হুঁশ হারিয়ে হোঁচট খেয়েছে এবং পুরো রাষ্ট্র ও জাতিকে বিপদগ্রস্থ করেছে। আমরা কথায় কথায় বলি, ইতিহাস থেকে শেখার কথা। তবে কঠিন সত্য হলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সেই সব রাজনৈতিক দলের নেতাগণেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন না। এটা সত্যিই এই রাষ্ট্রের একটি দুর্ভাগ্য ও কলঙ্কের। হয়তো একদিন এই কলঙ্ক মুক্ত হবে এই রাষ্ট্রটি। এই আশাটুকু কোনভাবেই ক্ষীণ হতে দেওয়া যায় না। এই রাষ্ট্রের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, রাজনীতি, মানুষের বহুবিধ মানসিকতা, সমাজ ও রাষ্ট্রের ন্যায়-অন্যায় আচার-আচরণ, ইচ্ছা- আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া। লেখক।
- নাম : খোলা জানালায় সমাচার
- লেখক: বুলবুল তালুকদার
- প্রকাশনী: : সপ্তর্ষি প্রকাশন
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 320
- ভাষা : bangla
- ISBN : 9789849958239
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2025