আমি জীবন-ভরা চেয়েছিলাম দেশবাসীর স্বীকৃতি
আমি জীবন-ভরা চেয়েছিলাম দেশবাসীর স্বীকৃতি (‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ বইয়ের সিলেক্টেড অংশ) আব্বাসউদ্দীন আহমদ আমার নাম ছিল শৈশবে শ্রী সেখ আব্বাসউদ্দীন আহমদ। গ্রামে তথা সমস্ত কুচবিহারে মুসলমান সমাজে এক আন্দোলন উঠল—নামের পূর্বে এই 'সেখ' কথাটা তুলে দিতে হবে। আমার তখন বয়স হবে আট বছর। পরিষ্কার মনে পড়ে আমাদের মহুকুমা তুফানগঞ্জে আমি সেদিন বাবার সাথে গিয়াছিলাম এক বিরাট সভায় যোগদান করতে। এক পয়সার কার্টিজ কাগজের শত শত কাগজে সবাই নাম লেখা আরম্ভ করল ‘সেখ’টা বাদ দিয়ে শ্রী অমুক বলে— সেই দস্তখত-নামা কাগজগুলো দরখাস্ত-সহ সেখানকার কাছারীতে জমা দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ তখন বুঝিনি। পরে বুঝেছিলাম যে তখন সাধারণতঃ শিয়া মুসলমানরা নাকি নামের আগে ঐ শব্দটি ব্যবহার করতেন। অতএব আমাদের সুন্নীদের এটি পরিত্যাগ করতে হবে। গ্রামে আরও প্রচার হতে লাগল যে এবার যারা মোহররমের সময় বাড়ীতে তাজিয়া তৈরী করবে তাদের সংগে সামাজিকতা চলবে না।
আমাদের গ্রামের সমাজে তখন সত্যিই বড় কড়াকড়ি নিয়ম ছিল। ছোটখাট মামলা-মোকদ্দমা আমার বাবা মৌলবী জাফর আলী আহমদ, বড় মামা ও কুচবিহার মহারাজার নাজিরের বংশধর কুমার গৌরনারায়ণ সিং এঁরাই মীমাংসা করে দিতেন। আমি অতশত বুঝতাম না, তবে মনটা বেশ খারাপ হল এই ভেবে যে গ্রামে আর তাজিয়া দেখতে পাব না। কী অপূর্বভাবে কাঁচি দিয়ে কাগজ কেটে সূক্ষ কারুকার্যের পরিচয় দিত আমের তাজিয়া তৈরী করার —এমন সুন্দর জিনিষ উঠে যাবে গ্রাম থেকে... আর বন্ধ হয়ে যাবে মোহররমের বাজনা এবং সংগে সংগে মোহররমের জারী!! মোহররমের বাজনা সত্যিই গ্রামে বন্ধ হল কিন্তু ভিন গাঁয়ে উঠল কাড়া-নাকাড়া শানাইয়ের বাচ্চা। তারা যখন আমাদের গ্রামের গঞ্জে দলে দলে এসে বাজনা এবং লাঠিসোটার খেলা দেখাতে লাগল তখন আমাদের গ্রামের যুবকরা যারা সমাজের ভয়ে দল ভেঙেছিল তারাও লুকিয়ে গিয়ে 'ডম্প' ( এক রকম ঢোল বাদ্যবিশেষ) নিয়ে দলের সাথে ভিড়ে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের গ্রামের আশেপাশে প্রায় দশ বারোখানা গ্রামের মোহররমের দল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল ।
- নাম : আমি জীবন-ভরা চেয়েছিলাম দেশবাসীর স্বীকৃতি
- লেখক: আব্বাস উদ্দীন আহমদ
- প্রকাশনী: : বাছবিচার বুকস
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 136
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : paperback
- প্রথম প্রকাশ: 2023