গহীনে দহন
তোরে কেডায় যাইতে কইছে বেশ্যা মাগী? আমার যা অয় অউক তাতে তর কি? বলতে বলতে জমিলার চুলের মুঠি ধরে এলোপাথারি কিল ঘুষি দিতেই থাকল সামসু মিয়া। মার খেতে খেতে জমিলার বাম চোখ ফুলে ঢোল, ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের দাগ। অনেক পুরানো জখমও আছে। কারণ মার খাওয়া জমিলার জন্য নতুন কিছু না। এক জখম ভাল হতে না হতেই নতুন জখম আবার তৈরি হয়। জমিলার এখন আর মনেই পরে না শেষ কবে সে নিজের জখম মুক্ত শরীর দেখেছিল। সামসু মিয়া জমিলার এক গাছি চুল ছিঁড়ে আরো কিছু এলোপাথারি লাথি দিয়ে গজ গজ করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
মাটির উপর পড়ে রইল জমিলা। উঠার শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। সামসু ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই কাপড়ের আলনার পেছন থেকে বের হয়ে এল ৮ বছরের রানু। কিছুদিন পর পরই রানু দেখে বাবা মাকে এমন ভাবে পিটায়। ভয়ে থরথর করে কাঁপে রানু। রানু কিছুতেই বুঝে না বাবা কেন মাকে এমন গরুর মত পিটায় ? রানু তো মন্ডল চাচার বাড়িতে দেখেছে যখন খ্যারের মলন দেয় গরু দিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে যখন গরুগুলো আর হাঁটতে চায় না তখন মন্ডল চাচার কামলা রা গরু গুলোকে এভাবে মারে। কিন্তু রানুর মা তো গরু না ! ছোট ছোট হাত দিয়ে রানু জমিলাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে।
পানি এনে দেয় , মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জমিলা তখন মেয়েকে বুকে নিয়ে ঝরঝর করে কাঁদে। অবুঝ রানু মায়ের বুকে থেকে মাকে জিজ্ঞেস করে- মা, আব্বায় তোমারে এমনে কইরা কেন মারে ? তুমি কি করছো মা ? জমিলা মেয়েকে আরো শক্ত করে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলে- বড় হ মা, আস্তে আস্তে হগ্গল ডাই বুঝবি । আর কত বড় হবে রানু? এই যে এখন সে নিজের সব কাজ নিজেই করে। মায়ের থালাবাসন মেজে দেয়। মায়ের তরকারি কুটে দেয়! যদিও এখনও মাছ কুটতে পারে না রানু। নিজের মনেই ভেবে নেয় যখন মাছ কুটতে পারবে তখন হয়ত বড় হবে রানু ।
- নাম : গহীনে দহন
- লেখক: ডা. ফাহমিদা মাহবুবা
- প্রকাশনী: : দাঁড়িকমা প্রকাশনী
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 128
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2022