
যে ঘাটে কভু তরী ভিড়েনি
কুমারের হাত ধরে আমি জীবনকে ভালোবাসতে শিখলাম। শিখলাম একা পথে হাঁটতে, মাথা উঁচু করে কথা বলতে। সিনেমা হল, পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা, থিয়েটার...কী দেখানো বাদ রাখল কুমার! সব দেখাল, কিছুই বাদ রাখল না। ওর জীবন জুড়ে যেন কেবল আমি। কোথাও কোনো ফাঁক নেই, অভিযোগের জায়গাটুকুও রাখেনি। আমার জন্য চুলে তেল দিয়ে বিনুনি গাঁথতেও শিখল কুমার। সময়ে-অসময়ে পায়ে আলতা পরিয়ে দিত। আমার মন একটু বিষণ্ণ দেখলেই ছুটে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত, টিপে দিতো কপালে। মনে হতো আমার সমস্ত জীবনের ভার এক মুহূর্তে কুমার তুলে নিয়েছে তার হাতে।
একবার ভীষণ জ্বরে পড়েছিলাম আমি। খাওয়া-দাওয়া উঠে গিয়েছিল রুচি থেকে। কিছুই খেতে পারছিলাম না। তখন কুমার নাকে কাপড় বেঁধে আমার জন্য শুঁটকি জোগাড় করে এনে তা রান্না করল।
তাদের উচ্চবর্গের পরিবেশে এই শুঁটকি বড়োই বেমানান। কুমারের বাবা ক’বার চোখ রাঙিয়েছেন। মা বলেছিলেন, “সম্মান থাকবে না আমাদের, যদি মানুষ জানে ঘরে এসব রান্না হয়।”
বাবা আবার কড়া গলায় বলেছিলেন, “লোকে হাসবে, কুমার।”
কিন্তু সেসবের কোনো তোয়াক্কাই করেনি ও। নিজের সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসটাকে যত্ন করে রান্না করল, আমার ভাত মেখে খাইয়ে দিলো।
জ্বরের ঘোরেও সেই যত্নে, সেই আহ্লাদে আমি কেঁদে উঠেছিলাম।
কুমার হেসে আমাকে বোকা বলল। জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, “তোমার সাথে জড়িত সবকিছুকেই আমি ভালোবাসি, ক্ষণপ্রভা। এ তো সামান্য শুঁটকি।
- নাম : যে ঘাটে কভু তরী ভিড়েনি
- লেখক: মম সাহা (বিষাদিনী)
- প্রকাশনী: : নবকথন
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 188
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2025