নবীজীর ﷺ হজ্জ
এখন হজ্জের মওসুম। মিম্বারে মিম্বারে হজ্জের আলোচনা। চারদিকে সাজ সাজ রব। কারও মুখে তালবিয়া, কারও মনে আগামীর স্বপ্ন, আর কারও হৃদয়জুড়ে মক্কা-মদীনার স্মৃতি ও হাহাকার! এভাবেই হজ্জের মওসুম আসে আর গোটা মুসলিম জাহানের হৃদয় ও আত্মাকে মথিত, আলোড়িত করে যায়। যতদিন থাকবে মুমিনের দেহে সামান্য প্রাণচাঞ্চল্য এবং থাকবে উম্মাহর হৃদয়ে কিছুমাত্র স্পন্দন, ততদিন মক্কা-মদীনা, মিনা-আরাফা আমাদের আলোড়িত করবেই।
হজ্জ কী? কেন মুমিন হৃদয়ে হজ্জের এত আকুতি? হজ্জ মহান স্রষ্টা আল্লাহর ঘরে বান্দার উপস্থিতি। পরম করুণাময় আল্লাহর ইবাদত। বান্দার প্রতি স্রষ্টার হক। ঈমানের আলোকিত নিদর্শন। কুরআন মাজীদে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন,
অর্থ : মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয। কেউ (এটা) অস্বীকার করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের সমস্ত মানুষ হতে বেনিয়ায।
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)
সুতরাং হজ্জ আল্লাহর হক, আল্লাহর ইবাদত। হজ্জের সফর একটি ইবাদতের সফর। এই ইবাদত এবং এই সফর তখনই সফল ও সার্থক হবে, যখন একে সেভাবেই আঞ্জাম দেওয়া হবে যেভাবে আল্লাহ আঞ্জাম দিতে বলেছেন এবং যেভাবে করে দেখিয়েছেন তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইসলামের অন্যান্য ইবাদতের মত হজ্জে-বাইতুল্লাহর ক্ষেত্রেও এটি স্বীকৃত যে, তার বাহ্যিক ও আত্মিক পূর্ণতার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ বাঞ্ছনীয়। যার হজ্জ ও ইবাদতে সুন্নাতে নববীর যত অনুসরণ থাকবে, তার হজ্জ ও ইবাদত তত জানদার ও শানদার হবে। তত ফলদায়ক ও ফলপ্রসূ হবে। এটি স্বীকৃত ও পরীক্ষিত বিষয়। অতএব বাইতুল্লাহর মুসাফিরের কর্তব্য, হজ্জের সফরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি পদে পদে এবং প্রতি পদক্ষেপে সুন্নাতে নববী খুঁজে খুঁজে তার অনুসরণের চেষ্টা করা। তবেই ইনশাআল্লাহ তার হজ্জ মাকবুল ও মাবরূর হবে। তার জীবনে হজ্জের শিক্ষা পরিলক্ষিত হবে। হজ্জের চেতনা বাস্তবায়িত হবে। হজ্জ থেকে সে ফিরে আসবে নিষ্পাপ মানব হয়ে, নিষ্পাপ থাকার চেতনা নিয়ে।
এর জন্য প্রয়োজন হজ্জের আগে এবং হজ্জের সময়ে ভালোভাবে জেনে নেওয়া কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ করেছেন এবং করতে বলেছেন। এবং হজ্জের রূহ ও রূহানিয়াত হাছিলের জন্য হজ্জের সফরে তিনি কোন্ কোন্ বিষয় ও আদাবের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখতে বলেছেন। এক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্জের সফরের অধ্যয়ন ও অনুধাবন অত্যন্ত বরকতময় ও ফলপ্রসূ। তাই বরেণ্য আল্লাহওয়ালাদের প্রায় সকলেই হজ্জের আগে এবং হজ্জের সফরে অত্যন্ত ইশক ও মহব্বতের সাথে ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে বিদায় হজ্জের অধ্যয়ন ও আলোচনা করতেন এবং সে রঙে নিজেদের হজ্জকে রাঙানোর আশেকানা চেষ্টা করতেন। ফলে তারা বিদায় হজ্জের শিক্ষা এবং ঐতিহাসিক বিদায় ভাষণের চেতনায় আরও বলিষ্ঠভাবে উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত হতেন। আজকের বাইতুল্লাহর মুসাফিরও যদি ভাব ও আবেগের সাথে বিদায় হজ্জের এবং বিদায় ভাষণের অধ্যয়ন ও অনুধাবন করেন, তবে তার পক্ষেও তা অনেক বরকত বয়ে নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সে লক্ষ্যেই বিদায় হজ্জের বিবরণ এবং বিদায় ভাষণের মৌলিক শিক্ষা ও দীক্ষা সম্বলিত আমাদের বর্তমান আয়োজন— “নবীজীর ﷺ হজ্জ”। মুহতারাম লেখক এতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্জের বিবরণ এবং বিদায় ভাষণের মৌলিক শিক্ষা ও বার্তাকে এত সুন্দর ও সরল ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন যে, তা পাঠকমাত্রকেই ভাবের জগতে চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের সেই নূরানী কাফেলার সাথে জুড়ে দেয়! এটি এই বরকতময় পুস্তিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই হজ্জের সময় এবং হজ্জের আগে ও পরে যদি এটি সঙ্গে রেখে অনুভব ও অনুভূতির সাথে পাঠ করা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ অশেষ বরকতের কারণ হতে পারে। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।
- নাম : নবীজীর ﷺ হজ্জ
- লেখক: শায়খ আবদুল্লাহ আল-বারনী আল-মাদানী
- প্রকাশনী: : মাকতাবাতুল আশরাফ
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 96
- ভাষা : bangla