
নট ফর সেল
লেখকের কথা
আমার বয়স তখন দশ বা এগারো। আবুধাবীতে হুলুস্থুল শোরগোল পড়ে গেল। প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হবে। আমি বুঝি না কিছুই। কিন্তু সবাই লাফায় তাই আমিও লাফাতে লাগলাম।
অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে বাবাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করলাম, "এটা আসলে কীসের প্রতিযোগিতা?" বাবা বললেন, "এই প্রতিযোগিতা হলো সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর নানান দেশ থেকে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাদের নির্বাচন করে এখানে নিয়ে আসা হয়, এদের মধ্যে কে সবচেয়ে সুন্দর তা নির্ধারণ করার জন্য।" আমি বসে রইলাম দেখার জন্য। না, জানি এবার স্বর্গের অপ্সরিদের মর্ত্যেই দেখতে পাব! কড়া মিউজিক আর বর্ণাঢ্য আলোকমালার ঝলকানির মধ্য দিয়ে শুরু হলো সুন্দরী প্রতিযোগিতা। প্রথমেই সব সুন্দরীদের জড়ো করা হলো স্টেজে। তাদের দেখে আমি প্রচণ্ড এক ধাক্কা খেলাম। বাংলাদেশের গলি ঘুপচিতেও এদের চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। আমার মাকে দেখেই তো দেশ-বিদেশের সবাই তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করত, জিজ্ঞেস করত মা'র বিবাহযোগ্যা বোন আছে কি না। বাবাকে বললাম, "এদের চাইতে মা'কে বিশ্বসুন্দরী করা হলেই তো ভালো হতো!" বাবা হো হো করে হাসতে লাগলেন, "তুমি কি চাও তোমার আম্মু এভাবে সবার সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করুক, আর কিছু অপরিচিত লোক তার সৌন্দর্য নাম্বার দিয়ে বিচার করুক?"
তাই তো! ব্যাপারটা তো এভাবে ভাবা হয়নি কখনো! পরে বুঝেছি এই বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন কত বড় প্রতারণা। একসময় বুঝতে পারলাম এটি মূলত নারীর দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে নারীকে ব্যবসার উপকরণে রূপান্তরিত করার একটি আধুনিক ও মোক্ষম উপায়। আদিকালে লোকালয় থেকে মেয়েদের অপহরণ করে পুরুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে ব্যবসা করার জন্য নানান দেহজ পেশায় বাধ্য করা হতো; কখনো কখনো অভাব বা অসহায়ত্ব তাদের এসব পেশায় ঠেলে দিত। কিন্তু এখন আমরা জাঁকজমক করে সর্বস্তরের মেয়েদের স্বেচ্ছায়, সর্বসমক্ষে এবং বাবা-মা'র আশীর্বাদসহকারে এই জাতীয় নোংরা পেশায় যোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করি। তারা "ব্যবসায়" নামার আগেই নিজেদের অ্যাডভার্টাইজ করার মতো একটি প্ল্যাটফর্ম পায়, বিখ্যাত হবার সুযোগ পায়। আর লোকজনও তাদের ছি ছি করে না, বরং বাহবা দেয়।
- নাম : নট ফর সেল
- লেখক: রেহনুমা বিনত আনিস
- প্রকাশনী: : সিয়ান পাবলিকেশন্স
- ভাষা : bangla
- প্রথম প্রকাশ: 2002
লগ ইন করুন ও রিভিউ যুক্ত করুন