nil sbujer desh (নীল সবুজের দেশ )

নীল সবুজের দেশ

৳220.00
৳128.00
42 % ছাড়
সফরনামা বা ভ্রমণকাহিনী মানেই বইয়ের পাতায় চড়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো। লেখকের সাথে সাথে পা ফেলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সফর করা। লেখক বহু শ্রম ও সময় খরচ করে দীর্ঘদিন ঘরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার অনেকটাই একটা রুমে বসে সহজেই পেয়ে যাওয়া। সেজন্য সফরনামা বরাবরই আমার প্রিয় একটি বিষয়। 'নীল সবুজের দেশে' বইটিও একটি সফরনামা। লেখক আল্লামা শিবলী নুমানি রাহ. এর তুর্কিস্থান, সিরিয়া ও মিসরের ভ্রমণ বৃত্তান্ত উঠে এসেছে এতে। উপর্যুক্ত দেশসমূহের কৃষ্টি, সভ্যতা ও সামাজিকতা তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। সেসব বিষয় সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করার জন্যই তিনি এই সফরনামা লিখেছেন। এই বইয়ের লেখককে মনে হয় নতুনকরে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। তাঁর নামই তাঁর পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। তবুও সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় যে, তিনি একাধারে একজন নন্দিত মুসলিম গবেষক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, ইতিহাস-বিশারদ ও বিখ্যাত আলেমে দ্বীন। উর্দু সাহিত্যে তাঁর অবদান এতো বেশি যে, তাকে বাদ দিয়ে এই ভাষার সাহিত্য-ইতিহাস রচিত হতে পারবে না। তিনি বর্তমান উত্তরপ্রদেশ আজমগড় জেলা বিন্দওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৩ সালে শিবলী ন্যাশনাল কলেজ ও আজমগড়ে দারুল মুসসানিফিন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি পরিচিত। ১৯১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৩৯২ হিজরিতে তিনি লম্বা এক সফর শুরু করেন। প্রায় ছয় মাসব্যাপী সেই সফরের বৃত্তান্ত তুলে ধরেন বইটিতে। কলমের আঁচড় টেনে জীবন্ত করে তোলেন তাঁর দেখা সব জায়গা। বইয়ের পাতায় পাতায় পাঠককে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে থাকেন এক শহর থেকে আরেক শহরে। সেসব শহরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, দর্শনীয় জায়গাসমূহ, বিখ্যাত সব ভবন ও স্থাপত্য, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা, কলেজ-ভার্সিটি-মাদরাসা, লেখক সম্প্রদায় ও তাদের রচনাবলি, লাইব্রেরি-সংবাদপত্র, সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিন, বিশিষ্ট বাক্তিবর্গ, প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষদের রুচি ও চারিত্রিক অবস্থা ইত্যাদি বহু বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন এতে। সমুদ্র পথ ধরে লেখক সর্বপ্রথম যান তুরষ্কে। যেতে যেতে পথে দেখা নানা রকম অভিজ্ঞতার বর্ণনা তিনি পেশ করেন পাঠকের সামনে। বোম্বাই থেকে মিশরের সুয়েজ খাল হয়ে তিনি তৎকালীন মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক তুর্কি খেলাফতের রাজধানী ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। সেখানেই সফরের সবচে বড় সময় অতিবাহিত করেন। তার এই সফরের সবচে বড় উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার অবস্থা স্বচোক্ষে অবলোকন করা এবং বিভিন্ন শহরে অবস্থিত প্রচীন লাইব্রেরি ও সেগুলোতে রক্ষিত দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থাবলি তালাশ করা। সেই সাথে নানান দেশের মানুষের সাথে মিশে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা। উক্ত সফরনামায় একজন পাঠক দেখতে পাবেন, কীভাবে কোন নতুন দেশে সফরে গেলে সেদেশের বিভিন্ন জিনিস তীক্ষ্ণভাবে অবলোকন করতে হয়। তাদের উঠাবসা, চলাফেরা, কথাবার্তাসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় দেখে তাদের স্বভাব-প্রকৃতির ব্যাপারে ধারণা লাভ করা যায়। আমার মনে হয়েছে বইটি থেকে শেখার মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল এই জিনিসগুলো। তুরষ্ক থেকে লেখক যান বৈরুতে। সেখানেও তিনি ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বিদ্যাপীঠ ও লাইব্রেরি পরিদর্শন করেন এবং সেই দেশের হালচাল তুলে ধরেন। তারপর যান সভ্যতার পাদপীঠ মিশরে। সেখানেও আগের মতোই নানান বিষয় পরিদর্শন করেন এবং সেগুলোকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। লেখক যেহেতু নিছক আনন্দ ভ্রমনের নিমিত্তে এই সফর করেন নি, করং তার উদ্দেশ্য ছিল কিছু জ্ঞানগত গবেষণা করা ও তথ্য সংগ্রহ করা, ফলে তিনি সংগৃহীত সেসব গবেষণামূলক তথ্যও বইটিতে যুক্ত করে দিয়েছেন কথার ফাঁকে ফাঁকে। ফলে বইটিকে শুধুমাত্র সফরনামাই নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেও গণ্য করা যায়। বিশেষত সেসময়কার মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক অবস্থা ও অবস্থান বোঝার জন্য বইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আরবের বহুদেশে, বিশেষত যেসব দেশ ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল সেগুলোতে, ফরাসি বা ফ্রেঞ্চ ভাষার সমাদর যে আছে সেটা আগে থেকে জানতাম। কিন্তু সেটা যে এতো বেশি ও রীতিমত বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত সেটা জানতাম না। বইটিতে এই বিষয়েও নতুন করে অনেক তথ্য জানতে পারলাম। আরেকটা তথ্য জেনে পুলকিত হলাম। গর্বও হল। সেটা হচ্ছে, সিরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন লেখক। বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাথলিক খৃস্টানদের। তারা তাদের সিলেবাসে শুধুমাত্র সাহিত্য শেখার মানসে পবিত্র কুরআনুল কারিমকে সিলেবাসভুক্ত করেছে। যা মূলত কুরআনের উচ্চাঙ্গের সাহিত্যসম্বলিত হবারই প্রমাণ বহান করে। তবে অত্যন্ত দুঃখের একটি বিষয় হল, মধ্যপ্রাচ্যের বহু লাইব্রেরিতে অনেক মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি পড়ে রয়েছে। দিনদিন সেগুলো নষ্ট হবার উপক্রম হচ্ছে। প্রকাশনীগুলো সেগুলো ছাপানোর তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। কারণ তারা সেসব বই প্রকাশেই বেশি উদ্যোগী, যেগুলো পাঠকপ্রিয় ও সবার কাছে পরিচিত। এই সুযোগে অনেক পশ্চিমা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সেসব পাণ্ডুলিপির অনুলিপি তৈরি করে নিজেদের দেশ থেকে তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করছে। আমাদের নিজেদের সম্পদ আমাদেরই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়াটা বেশি সস্থিদায়ক ও নির্ভরযোগ্য হতো। কথায় আছে, মক্কার লোক নাকি হজ্জ্ব পায় না। এখানে হয়েছে সে দশা। লেখক যখন তুরষ্কে গিয়েছেন, তখন তুর্কি খেলাফতের বাতি প্রায় নিভু নিভু করছিল। সেসময়ও তিনি সেই খেলাফত ও খলিফার যে জৌলুস দেখেছেন তার থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, যৌবনে এই খেলাফতের শান-শওকত কতো বেশি ছিল। তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার সামনে গোটা ইউরোপের থরথর করে কম্পমান হওয়াটা সে হিসেবে মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। মূল বইটি উর্দু থেকে অনুবাদ করা হলেও পড়তে গিয়ে একবারও মনে হয় নি যে এটি কোন অনূদিত গ্রন্থ। বরং সাবলীল ও ঝরঝরে বাঙলাতে রচিত গ্রন্থ বলেই অনুমিত হয়েছে। যা মূলত অনুবাদকের দক্ষতারই প্রমাণ বহন করে। অনুবাদক মহোদয় আরেকটি কাজ করলে ভালো হতো। তা হল, শুরুতে মূল লেখকের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী সংযুক্ত করা ও তার কর্ম-পরিচয় তুলে ধরা। তাহলে যারা লেখকের সাথে পরিচিত নয় বা সল্প পরিচিত তারা উপকৃত হতে পারতেন এবং এটি বইয়ের মানকে আরো বৃদ্ধি করতো। সবশেষে বলবো, এই বইটি আমাকে সফরনামা কীভাবে লেখতে হয় তা শিখিয়েছে। প্রতিটি অঞ্চল পরিদর্শনের সময় কীভাবে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে সে এলাকার পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি খেয়াল করতে হয় তা বুঝিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের পতনোম্মুখ সময়ে তুরষ্কের ও মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল তা চিনিয়েছে। সেসব দেশের শিক্ষাদীক্ষা, লাইব্রেরি ও লেখক-গবেষকদের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছে। এই ধরনের বিষয়ে জানতে আগ্রহী প্রতিটি পাঠকের পাঠ্য-তালিকাতেই বইটি অনায়েসে স্থান করে নেবার যোগ্যতা রাখে।

সঠিক মূল্য

সকল পণ্য তুলনামূলকভাবে বাজারের সমমূল্যে বা এর চেয়ে কম মূল্যে বিক্রয় করা হয়

ডেলিভারী

বাংলাদেশের যে-কোন প্রান্তে ২-৫ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়

নিরাপদ পেমেন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ

২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার

সার্বক্ষণিক কেনাকাটার জন্য সার্বক্ষণিক সহায়তা
পণ্যটি সফলভাবে কার্টে যুক্ত হয়েছে     কার্ট দেখুন