সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী
ইসলামের এক বীর সেনা "সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব" (১১৩৭–১১৯৩) ছিলেন মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান এবং আইয়ুবীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। পাশ্চাত্যে তিনি "সালাদিন" বলে পরিচিত। তিনি কুর্দি জাতি গোষ্ঠীর লোক ছিলেন।
ইসলামী খিলাফত গুলোর মধ্যে ফাতেমীয় খিলাফত চতুর্থতম। এই খিলাফত ইসমাইলি শিয়া মতবাদকে ধারণ করত। পূর্বে লোহিত সাগর থেকে শুরু করে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকা এই খিলাফতের অধীনস্থ ছিল।
১১৬৯ সালে ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদ, সালাহউদ্দিনকে তার উজির নিয়োগ দেন। শিয়া নেতৃত্বাধীন খিলাফতে সুন্নি মুসলিমদের এমন পদ দেয়া বিরল ঘটনা ছিল। উজির থাকা কালে তিনি ফাতেমীয় শাসনের প্রতি বিরূপ ছিলেন। আল আদিদের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য ঘোষণা করেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান, ইয়েমেনে সফল বিজয় অভিযানের আদেশ দেন এবং উচ্চ মিশরে ফাতেমীয়পন্থি বিদ্রোহ উৎখাত করেন।
১ম ক্রুসেডে কতিপয় মুসলিম আমিরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে পরাজয় বরন করল মুসলিম বাহিনী। হাজার হাজার মুসলিমের লাশের উপর দিয়ে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করল সম্মিলিত খ্রিস্টান ক্রুসেডার বাহিনী। ক্রুসেডারদের এই বিজয়ে সর্বত্র খ্রিস্টান দেশগুলতে শুরু হয়ে গেল বিজয়ের উৎসব। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ উৎসব হল বাইতুল মুকাদ্দাসে।
৮৮ বছর পর লেভান্টে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন। সালাহউদ্দিনের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে আইয়ুবী সেনারা ১১৮৭ সালে হিত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে। এর ফলে মুসলিমদের জন্য ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করা সহজ হয়ে যায়।
ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তার সালতানাতে মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সুলতান আইয়ুবী কর্তৃক বাইতুল মুকাদ্দাস নিয়ন্ত্রণে নেবার প্রায় ৮০০ বছর পর এবং ইসলামী খিলাফাত ধ্বংসের ৪৩ বছর পর মুসলিম বিশ্ব আবার প্রত্যক্ষ করল এক বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক ঘটনা। মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক অনৈক্য ও দুর্বলতার ফলে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস আর মসজিদুল আকসা আবার চলে গেল কাফেরদের হাতে। খ্রিস্টানদের মদদে তার কর্তৃত্ব নিল অভিশপ্ত ইহুদী জাতি।
সালাহউদ্দিন ছিলেন মুসলিম, আরব, তুর্কি ও কুর্দি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ১১৯৩ সালে তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তার অধিকাংশ সম্পদ তিনি তার প্রজাদের দান করে যান। উমাইয়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে তার মাজার অবস্থিত।
- নাম : সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী
- লেখক: সাইয়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
- প্রকাশনী: : মাকতাবাতুল ইসলাম
- ভাষা : bangla
- প্রথম প্রকাশ: 2017
লগ ইন করুন ও রিভিউ যুক্ত করুন