সমকালীন প্রেক্ষাপটে ইসলামের হদ-কিসাস
লেখক:
শায়খ সাইদ রামাদান বুতি
অনুবাদক:
আলী হাসান উসামা
প্রকাশনী:
মাকতাবাতুশ শামস
বিষয় :
তাফসীর বিভাগ,
ইসলামী বিধি বিধান ও মাসয়ালা-মাসায়েল,
ইসলামী রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, আন্দোলন ও অন্যান্য শাসনব্যবস্থা
৳140.00
৳90.00
36 % ছাড়
ইসলামি শরিয়াহ্র হদসমূহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্থায়িত্ব এবং অপরিবর্তনীয়তা। বিশ্ব-বসুন্ধরায় ইসলামের আগমনের পর চৌদ্দ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মাঝে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি, পৃথিবীর পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সভ্যতা-সংস্কৃতিতে কতো বিবর্তন ঘটেছে। অথচ এই হদসমূহ ঠিক যেমন ছিলো, তেমনই আছে। তাতে ন্যূনতম পরিবর্তন-পরিবর্ধনও সংঘটিত হয় নি। এই হদগুলো না কাঠিন্যের স্তর মাড়িয়েছে আর না তাতে কিছুটা নমনীয়তা বা শৈথিল্য প্রকাশ পেয়েছে।
মানবাত্মা—তা যেখানেই থাকুক না কেনো—সেকেলে ধারার বিরুদ্ধে সর্বদা একধরনের জটিল অবস্থানে থাকে। মানবাত্মা সেকেলে ধারার প্রতি বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট থাকে। কেননা তার কাছে বোধ হতে থাকে, কাল সর্বদা সকল কল্যাণের রস নিংড়ে আনে এবং তাতে যতো উপকার ও সুবিধাদি থাকে—তার সবকিছু উন্মোচিত করে ছাড়ে। মানবাত্মা প্রত্যেক নতুনের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে এবং নতুনত্বের প্রতি আগ্রহবোধ করে। কেননা সাধারণত তার দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়ে থাকে যে, যামানা এমন সব কল্যাণ ও উপকারি আবিষ্কারের সোপান উন্মোচিত করেছে, যা ইতোপূর্বে উন্মোচিত হয় নি।
পাঠক, তুমি পৃথিবীর সর্বাধুনিক আইন হাতে নাও—এমন আইন, যা শ্রেষ্ঠতর আইন বিশারদগণের হাতে প্রণীত হয়েছে, যুগের সকল প্রয়োজনের সমাধান যাতে সুবিন্যস্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যে আইন যুগের রকমারি অবস্থা এবং পরিস্থিতির সাথে সুসমঞ্জস, এরপর বিপুল জনসমষ্টির সামনে সেই আইন উপস্থাপন করে এ অভিমত ব্যক্ত করো যে, এ হলো প্রাচীন আইনের একটি সংকলন, যা জাস্টিনিয়ানের (নিচে টীকা দ্রষ্টব্য) যুগে প্রণীত হয়েছে। এরপর দেখো এই জনসমষ্টির অধিকাংশ মানুষই কীভাবে সেই আইনের প্রতি বিরক্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করে, এরপর গভীরভাবে লক্ষ করো, কীভাবে তারা এতে একের পর এক ত্রুটি আবিষ্কার করে চলে!
এরপর তুমি আরববিশ্বের কোনো অঞ্চলে প্রয়োগ করা হয়েছে—এমন যেকোনো নাগরিক অধিকার আইনের প্রতি দৃষ্টিপাত করো। তুমি দেখবে, তার অর্ধেকেরও বেশি ধারা ইসলামি শরিয়াহ্র ভিত্তিতে ফিকহের বিভিন্ন মাযহাবের আলোকে গঠিত হয়েছে। অথচ এ বিষয়টি জনমানুষ তা প্রশান্তচিত্তে গ্রহণ করে নেয়া এবং দৈনন্দিন জীবনে তা বাস্তবায়ন করার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার অন্তরায় সৃষ্টি করে নি। কারণ, এ-সকল আইনের জন্ম, প্রণয়ন এবং জনমানুষ কর্তৃক তা গৃহীত হওয়ার ইতিবৃত্ত সম্পূর্ণ আধুনিক প্রকাশভঙ্গি এবং এক সদ্য প্রকাশিত ইতিবৃত্ত। তাছাড়া এ আইনগুলো মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে এ-কথা বলে যে, এ এক সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার। এভাবে উপস্থাপন করা হয় নি যে, আইনগুলোর অর্ধেক কিবা তার অধিকাংশ তুলে আনা হয়েছে প্রাচীন বিধিবিধান থেকে, যেগুলো স্রেফ ইসলামি শরিয়াহ্র বিধিবিধান।
এই আত্মিক গ্রন্থি—নতুন পুরনোর গ্রন্থি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে শুধু তারাই মুক্ত হতে পারে, যারা নিজেদের আকলকে অনুমান-কল্পনা থেকে মুক্ত করতে এবং বিবেকবুদ্ধিকে নফস ও প্রবৃত্তির দুর্বিপাক থেকে স্বাধীন রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করে ।
তবে তারা নিজেদের আকলকে এই আত্মিক গ্রন্থি থেকে তখনই মুক্ত করতে পারে, যখন তারা এক আবশ্যিক চাবিকাঠির সাহায্য নিয়ে থাকে। সামনে যখন আমরা এ-সকল কল্পিত অসঙ্গতির সমাধান প্রসঙ্গে আলোচনা করবো, তখন ইন শা আল্লাহ এই চাবিকাঠির বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরবো।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দৈনন্দিন জীবনবিধিতে চারিত্রিক এবং নাগরিক অধিকার আইন সংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, নতুন-পুরাতনের গল্প এক্ষেত্রে জাঁতাকলের চাকার অক্ষের আকৃতি পরিগ্রহ করেছে। আফসোসের মাত্রা তখন বেড়ে যায়, যখন আমরা জানতে পারি যে, তা শুধুই এক কাল্পনিক অক্ষ; জ্ঞানের প্রতিপাদ্যবিষয় এবং সমস্যার সমাধানকল্পে সাধারণভাবে যার কোনোই ভূমিকা নেই।
অর্থাৎ আমরা যে বিধান, আইন এবং চারিত্রিক মূল্যবোধ গ্রহণ করি এবং যা বর্জন করি, আদতে প্রবৃত্তির তাড়নায় আমরা সব করে থাকি; বুদ্ধিবৃত্তির কারণে এমনটা করি না।
আমাদের ইসলামি সমাজে শরিয়াহ্র হদ প্রবর্তনের ব্যাপারে যারা অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, এই প্রথম উপলক্ষ্যটি তাদের সেই অসম্মতি জ্ঞাপনের প্রধানতম কারণগুলোর একটি। তারা অন্তরে এই ভেবে সঙ্কুচিত হন যে, ইতিহাসের সংরক্ষাণাগারে এতোকাল সুপ্ত থাকার পর ফের সেই প্রাচীন ধারার আবির্ভাব ঘটবে! এ কারণেই ইসলামি শরিয়াহ্র হদসমূহ এমন এক বাস্তবতার রূপ পরিগ্রহ করেছে, সমাজ ঘৃণাভরে যা প্রত্যাখ্যান করছে। তারা ভাবতেই পারছে না—এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই মধ্যযুগের মতো ব্যভিচারীকে বেত্রাঘাত করা হবে বা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে! চোরের হাত কেটে ফেলা হবে!! আর মদ্যপকে বেত্রাঘাত করা হবে!!!
{{ টীকা: সম্রাট জাস্টিনিয়ান (৪৮২ খ্রিস্টাব্দ – ১৪ নভেম্বর ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ), যিনি ‘জাস্টিনিয়ান দ্য গ্রেট’ নামে পরিচিত, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের একজন শাসক। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের পুরো নাম—‘ফ্লাভিয়ুস পেক্রস সাবাতিয়ুস ইয়ুস্তিনিয়ুস অগুস্তুস’। তার শাসনকাল ১ আগস্ট ৫২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩/১৪ নভেম্বর ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই সময়কালে তিনি ধ্রুপদী পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্যকে একীভূত করার চেষ্টা করেন। ৫২৯ থেকে ৫৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি বেশকিছু আইন জারি করেন; ইতিহাসে যেগুলো ‘জাস্টিয়ান কোড’ নামে পরিচিত। শায়খ (রাহিমাহুল্লাহ) এখানে প্রসঙ্গক্রমে সেই ‘জাস্টিয়ান কোডে’র দিকে ইঙ্গিত করেছেন। —আলী হাসান উসামা }}
- নাম : সমকালীন প্রেক্ষাপটে ইসলামের হদ-কিসাস
- লেখক: শায়খ সাইদ রামাদান বুতি
- অনুবাদক: আলী হাসান উসামা
- প্রকাশনী: : মাকতাবাতুশ শামস
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : hard cover
- প্রথম প্রকাশ: 2017
লগ ইন করুন ও রিভিউ যুক্ত করুন