

কুররাতু আইয়ুন-২ যে জীবন জুড়ায় নয়ন
মানুষের ব্যক্তিজীবনকে সবচেয়ে বেশি স্ট্রেসে ফেলে দেয়
‘লৌকিকতা’, সোজা
বাংলায়—‘লোকে কী মনে করছে/করবে’। আরও আটপৌরে বাঙলায় বললে ‘কেমন দেখা যায়?’ বা ‘তারপরও কেমন না ব্যাপারটা?’ বা ‘সমাজে অবস্থান ধরে রাখা’ বা ‘স্ট্যাটাস’।
এ-বিষয়টার জন্য মূল জিনিসের তিন গুণ খরচ বাড়ে। যদি ১০ টাকার
জিনিসে কাজ হয়, তো
৩০ টাকার জিনিসটা কিনতে হয়, বাকি
২০ টাকা হলো ‘কেমন দেখা যাবে’র দাম। প্লেটের মাকসাদ খাওয়া/খাওয়ানো। মেলামাইন হলেও
হয়, কিন্তু
‘লোকে বলবে কী’র জন্য চিনেমাটি না হলে হচ্ছে না।
এই শো-অফ মেটাতে গিয়ে জীবন হয়ে গেছে কঠিন। বাচ্চাদের জীবনও
কষ্টকর হয়ে যায় আমাদের শো-অফ মেটাতে গিয়ে। এখন তো ‘আমি স্কয়ারে চিকিৎসা করাই’ বা
‘আমি ঢাবি মস্কে জুমআ পড়ি’ বা ‘আমার মেয়ে ভিকারুননিসায় পড়ে’—এগুলোও শো-অফের জন্য
হয়ে গেছে। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো শো-অফটাও একটা চাহিদা হয়ে গেছে।
• তো
এই এক্সট্রা খরচের জন্য বেশি টাকা কামাই করতে হচ্ছে।
• বেশি
কামাইয়ের জন্য এক্সট্রা এফোর্ট ও সময় লাগছে (শ্রম বেশি+রেস্ট কম)।
• এক্সট্রা
কামাইয়ের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে (দুর্নীতি+ব্যস্ততা+স্ট্রেস)।
নিজের শরীর-মন শেষ হয়ে যাচ্ছে, পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে, আখিরাত বরবাদ হচ্ছে, ছোট-ছোট কত সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাতে কী
হয়েছে, মানুষ
তো ভালো বলছে। মুখ তো রক্ষা হচ্ছে। আল্লাহর হুকুম নষ্ট করে আমরা লৌকিকতা রক্ষা
করছি—হোম লোন, কার
লোন। আমার একটা গাড়ি না-থাকলে কেমন দেখায়; অমুকের
আছে, আমার
নেই, লোকে
ভাববেটা কী! ছি ছি। অমুকে দুইতলা করে ফেলেছে, আমি
এখনো কিছুই করতে পারলাম না। ন্যাও, সুদে
লোন।
দুনিয়ার জন্য প্রতিযোগিতা, দেখানোর
প্রতিযোগিতা, দেখিয়ে
দাও অদেখা তোমায়। দুনিয়াতে এই প্রতিযোগিতার কোনো শেষ নেই—তৃপ্তি হয় না, সাধ মেটে না। ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা
তোমাদের মোহাচ্ছন্ন রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের জীবনে উপনীত হও।’ এই একটা জিনিসই
আপনার সব কেড়ে নিয়েছে, এই
প্রতিযোগিতাই আপনাকে ২৪ ঘণ্টা খাটায়, একদণ্ড
বিশ্রাম দেয় না, ঘুমের
ভেতরেও আপনাকে ছাড়ে না। জীবন থেকে এই একটি জিনিস বাদ দিতে পারলে দেখবেন, সুখ-আরাম-মৌজ-সময়—কোনো কিছুর অভাব নেই।
আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৪০০ বছর আগে
প্রশান্তিময় জীবনের সূত্র নিজে করে দেখিয়ে হাতেকলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন—‘নিশ্চয়
সাদাসিধে জীবন ঈমানের অঙ্গ, অবশ্যই
সাদাসিধে জীবন ঈমানের অঙ্গ।’ এই পৃথিবীতে আমার মুসাফিরের জীবন। এখানে সাজাতে আসিনি, কাউকে দেখাতে আসিনি, কারও সাথে টক্কর দিতে আসিনি, চলে যাবো, থাকবো
না। অন্তরের তৃপ্তিই আসল সম্পদ। অন্তরের দারিদ্র্যই প্রকৃত দারিদ্র্য।
- নাম : কুররাতু আইয়ুন-২ যে জীবন জুড়ায় নয়ন
- লেখক: ডা. শামসুল আরেফীন
- অনুবাদক: মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ
- প্রকাশনী: : মাকতাবাতুল আসলাফ
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 160
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : paperback
- প্রথম প্রকাশ: 2020