নির্বাচিত ছোটগল্প-১
দীর্ঘ কাদা-জলের পথ পেরিয়ে স্টেশনে যখন পৌছলাম- ঘড়িতে তখন নয়টা পঞ্চাশ । সবকিছু ঠিক থাকলে এখনই কিংবা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাতের শেষ ট্রেনটি চলে আসার কথা। ঘন গাছপালায় ঘেরা ছােটোখাটো স্টেশন। স্টেশনের চারদিকটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন। শুধু ফ্ল্যাটফর্মে গুটিকয়েক বৈদ্যুতিক বাতি টিপটিপ করে জ্বলছে। মফস্বলের স্টেশন বলেই হয়তাে স্বল্প ভােল্টেজের কারণে বাতিগুলাের এই রুগ্ন দশা।
পুরাে স্টেশন জুড়ে যেন শ্মশান-শূন্যতা। খাঁ-খাঁ করছে চারদিক। কোথাও কোনাে জনমানুষের দেখা নেই। হঠাৎ বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠল। অথচ দু'দিন আগেই ঢাকা থেকে আমি যখন এই স্টেশন এসে নামলাম, তখন এই স্থানটি বেশ জমজমাট ছিল। হকার ফেরিওয়ালাদের হাকডাকে স্টেশন মুখরিত ছিল। সেটা ছিল অবশ্য দিনের বেলা। এই স্টেশনের রাতের পরিবেশ আমার জানা নেই। এই অঞ্চলে আমি আগে কখনাে আসিনি। রােহানপুরে আমি এবারই প্রথম। এনজিওতে কাজ করার এই একটাই সমস্যা প্রায়শই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গিয়ে কাজের তদারকি করতে হয়।
রােহানপুরে এখন পুরােদস্তুর বর্ষা। অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট প্রায় তলিয়ে গেছে। সারাদিন কাদা-জলের পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে আমি যথেষ্ট ক্লান্ত। সন্ধ্যায় বসে আছি রােহানপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের অফিসের বারান্দায়। বাইরে বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাসও আছে। ক্লান্তিতে | আমার ঘুম চলে আসার মতাে অবস্থা। বিছানায় গেলেই আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না। ভেসে যেতাম ঘুমের বন্যায়। সময়টা ভর সন্ধ্যা বলে বিছানায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। অফিসের পিয়নকে ডেকে কড়া লিকারের চায়ের কথা বলেছি। চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঢাকা থেকে রায়হান কবির স্যারের জরুরি ফোন। যে করেই হােক রাতের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে হবে ।