তিথিডোর : মুক্তিযুদ্ধের একটি উপন্যাস হতে পারতো
বাংলাদেশের অগ্নিদিনের স্মৃতিজাগানিয়া এ এক উপাখ্যান। ইতিহাসের নির্মম এবং নির্মোহ চাবুক কয়েকজন মানুষের জীবনকে কীভাবে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারে তারই একটি খণ্ড চিত্র এঁকেছেন আহমদ বশীর । অদৃশ্য এক সুতোর মিলনে চরিত্রগুলো যখন পুতুলনাচের উপজীব্য, শহর থেকে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে তৈরি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা, কেউ-বা ঘাতক পাকিস্তানি পাপচক্ৰকে মেনে নিচ্ছে অন্তর্ঘাতী স্বদেশবোধ থেকে, কেউ নরঘাতক রাও ফরমান আলীর হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কে এবং কেন?
মনে পড়ে যায় একাত্তরের প্রথম প্রহরে ঢাকা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা। সেই সময় স্বৈরাচারী ইয়াহিয়া অস্বীকার করতে চায় বাংলাদেশের গণদাবি । যে দর্শক উৎফুল্ল হয়ে খেলা দেখছিলো, তারাই তখন ক্রীড়া ক্ষেত্ৰ লণ্ডভণ্ড করে জাগিয়ে তোলে বিশাল মিছিল, মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। প্রতিবাদের অগ্নিবাণে। মনে পড়ে সত্তরের নির্বাচন শেষে ঢাকা শহরের নয়াবাজারের মোড়ে পড়ে থাকা আওয়ামী লীগের নৌকার বিজয়তোরণ।
তার পাশে বংশালের হােটেল সাইনু পালোয়ানের সাইনবোর্ড, তারপাশে পুরনো এক বাড়ি নাম তার "তিথিডোর"। সেই বাড়ির মেয়টা, ঘোড়ার গাড়িতে করে যাকে যেতে হতো কামরুন্নেসা স্কুলে, তারাও তো মুক্তিযুদ্ধ আছে! আছে বুকভরা অভিমান। কেন তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে? মেনে নিতে হলো এতবড় বিচ্ছেদ........। এত আগুন, এত প্ৰেম, আর এত শব্দের পরেও কি হারিয়ে যাবে একটি নিনাদ, “জয় বাংলা" ?