
কেউ কেউ কথা রাখে
লেখক পরিচিতিঃ
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন-এর জন্ম ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে এক বছর পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বিশ্বমানের অসংখ্য জনপ্রিয় থৃলার অনুবাদ করার পর অবশেষে তার পর পর আটটি মৌলিক থৃলার নেমেসিস, কন্ট্রাক্ট, নেক্সাস, কনফেশন, করাচি, জাল, ১৯৫২ এবং রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি প্রকাশিত হলে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। সেই অনুপ্রেরণা থেকে বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক থৃলার লেখার কাজ করে যাচ্ছেন।
তার পরবর্তী গৃলার উপন্যাস নেক্সট, কজিতো, পেন্ডুলাম, দেওয়াল, পহেলা বৈশাখ, এলিভেটর, ঘুমি সানডে এবং ম্যাজিশিয়ান প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অনুবাদ করলেও বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে মূলত মৌলিক গল্পউপন্যাসই লিখে যাচ্ছি, যদিও পাঠক নিয়মিত তাগাদা দিয়ে থাকে অনুবাদের জন্য। তারা যে আমার অনুবাদের অভাব বোধ করে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তাই গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ভিন্নধর্মি কিছু অনুবাদ করবো। অনেক আগেই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান আর স্প্যানিশ খৃলার অনুবাদ করেছি, অন্যকে দিয়ে করিয়েওছি। আমার নিজের কাছে গল্পের গভীরতা আর ভিন্নধর্মি কনটেক্সটের কারণে নন-ইংলিশ ক্রাইম-খৃলারগুলো বেশি ভালো লাগে।
ছাত্রজীবন থেকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের খোঁজ-খবর রাখলেও ওখানকার ক্রাইম-থ্রলারগুলো খুব একটা পড়া ছিলো না। কয়েক বছর আগে কিছু লাতিন ক্রাইম-থ্রলার পড়তে শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এদুয়ার্দো সাচেরির লা প্রেহু দে সুস ওহোস-এর (La pregunta de sus ojos) ইংরেজি অনুবাদটি পড়ে ফেলি। বইটি আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। সিদ্ধান্ত নেই অনুবাদ করার জন্য, কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে-মৌলিক লিখতে লিখতে অনুবাদ করা ভুলে গেছি। মূল কাহিনী আর চরিত্রগুলো পাশ কাটিয়ে নিজের মতো করে লিখতে শুরু করে দিয়েছি!
সম্ভবত এর কারণ, ঐ সময় আমার মাথায় সাচেরির গল্পটির মতোই একটি পিরিওডিক্যাল মার্ডার মিস্ট্রি ঘুরপাক খাচ্ছিলো। অন্যদিকে, মূল উপন্যাসের সময়কাল আর রাজনৈতিক আবহের সাথে আমাদের দেশের একটি সময়ের আশ্চর্য রকমের সাযুজ্যও খুঁজে পেয়েছিলাম যাই হোক, লেখাটা যখন শেষ করলাম তখন সেটা আর অনুবাদ রইলো না , আবার পুরোপুরি মৌলিক বললেও এদুয়ার্দো সাচেরির প্রতি অবিচার করা হবে।পাঠককে বলবো, কেউ কেউ কথা রাখে পুরোপুরি নিরীক্ষাধর্মি একটি কাজ। গল্পটি আমার যেমন ভালো লেগেছে তেমনি তদেরও যদি ভালো লাগে তবে সার্থক মনে করবো।
বইয়ের কিছু কথা
দশ-পনেরো মিনিট পায়চারি করেও দরজাটা দিয়ে ঢুকতে পারিনি। ওখানে যাবার আগে বুঝতে পারিনি এরকম দ্বিধায় পড়ে যাবো, আর সেটা ঠিক দরজার সামনে এসেই। জানি না কেন, তবে নিশ্চিতভাবেই সময় এখানে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সবাই বলে সময় সবকিছু সারিয়ে তোলে, কিন্তু ঐদিন মনে হচ্ছিলো সময় শুধু সারিয়েই তোলে না, জড়তা আর দ্বিধার স্তুপও বাড়িয়ে দেয়। ঐ মুহূর্তে আমি সেই স্তুপের তলে তলিয়ে গেছিলাম।
জ্ঞান হবার পর থেকেই জানি সাহসিদের মধ্যে আমি পড়ি না, কিন্তু সামান্য একটি খোলা দরজা দিয়ে ঢোকার মতো সাহস নিশ্চয় আমার আছে, তাই এরকম দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই ছিলো না, তারপরও সেই খোলা দরজাটি কোনো দূর্গের বিশাল আর ভারি ফটকের মতোই পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো আমার সামনে। ভাগ্য ভালো, সমস্ত দ্বিধা আর সংকোচ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলাম অপরিচিত একজনের হস্তক্ষেপে। লেখালেখি করে যে টুকটাক পরিচিতি পেয়েছি সেটা আবারও টের পেলাম।<br> ঐ খোলা দরজা দিয়ে এক যুবক বেরিয়ে আসার সময় আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। আগ বাড়িয়ে জানায় সে আমার লেখার একজন পাঠক।
ভক্তদের সাথে এরকম আকস্মিক দেখা-সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা নয়। তাদের আচরণ, কথাবার্তা, উচ্ছাসের সাথেও আমি পরিচিত।<br> করমর্দন করতে করতেই পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের ঐ যুবক অনেক কিছু বললো, তারপর যখন জানতে পারলো আমি কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছি সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলো সে। কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আমি?-তার সঙ্গত প্রশ্নের জবাবে সেই নামটি উচ্চারণ করলাম যে নামটি আমার হৃদয়ের গহীনে দীর্ঘস্থায়ী আস্তানা গেড়ে আছে দুই যুগ ধরে। খুবই আন্তরিকভাবে আমাকে লিফট পর্যন্ত পৌছে দিলো সেই তরুণ, সেই সাথে কতো তলায় যেতে হবে সেটাও বলে দিলো। এমনকি লিফটে করে আমাকে নির্দিষ্ট সেই অফিসে পৌছে দেবার আগ্রহও দেখিয়েছিলো তবে আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে.......
- নাম : কেউ কেউ কথা রাখে
- লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন
- প্রকাশনী: : বাতিঘর প্রকাশনী
- ভাষা : bangla
- ISBN : 9789848729823
- বান্ডিং : hard cover
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 269
- প্রথম প্রকাশ: 2015