ইন্টারভিউ সিরিজ ১৭
টনি মরিসনের জন্ম ১৯৩১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে, আমেরিকার ওহায়ো স্টেটের লরেইন শহরে। জন্ম থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত উনি ক্লোয়ি আর্ডেলিয়া ওফোর্ড নামেই বড় হইছেন, পরে ক্যাথলিক ব্যাপ্টিজম অনুষ্ঠানে সেইন্ট অ্যান্থনিরে সম্মান কইরা নিজের নতুন নাম রাখেন ক্লোয়ি অ্যান্থনি ওফোর্ড। এই অ্যান্থনি থেকেই টনি নামটা আসছে। একটা কালো ওয়ার্কিং ক্লাস পরিবা্রে উনি বড় হইছেন। মরিসনের বাবা জর্জ ওফোর্ডের যখন ১৫ বছর বয়স, উনি দুইজন কালো মানুষকে পাবলিক লিঞ্চিংয়ের শিকার হইতে দেখছিলেন। রেসিজমের এমন ভয়ানক রূপ উনারে এমন ট্রমাতে ফেলছিল যে উনি বাসায় কোন সাদা মানুষরে ঢুকতে দিতেন না। লিঞ্চিংয়ের পরে উনি জর্জিয়া থেকে তুলনামূলক রেশিয়ালি লিবেরাল ওহায়োতে চইলা আসেন আর একটা স্টিল কোম্পানিতে ওয়েল্ডারের চাকরি নেন। একবার বাসার ভাড়া না দেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালা উনারা বাসায় থাকা অবস্থাতেই বাসাতে আগুন লাগায়া দেন।
মরিসনের বয়স তখন দুই বছর। উনার বাবা-মা বিচলিত না হয়া উলটা বাড়িওয়ালারে নিয়া হাসাহাসি করছিল, তো এই ঘটনা পরে উনার মনে রেশ কাটে। বাজে থেকে বাজে অবস্থায়ও নিজের ইন্টেগ্রিটি ঠিক রাখার গুরুত্বটা বুইঝা ফেলেন উনি। ছোটবেলা থেকেই মরিসন অনেক বই পড়তেন। ওই সময় থেকেই উনার বাবা-মা উনারে আফ্রিকান-আমেরিকান কালচারের ফোকটেইল, ভূতের গল্প, গান শুনায়া বড় করছেন। পরে ১৯৪৯ সালে উনি ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। হাওয়ার্ডে আইসা জীবনে প্রথম উনি কালোদের জন্য আলাদা রেস্টুরেন্ট আর বাস দেখেন। ‘৫৩ তে ইংরেজিতে বিএ পাশ কইরা দুই বছর পরে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন।
১৯৫৭ সাল থেকে সাত বছর হাওয়ার্ডে টিচার ছিলেন, এর মধ্যে হ্যারল্ড মরিসনের সাথে পরিচয় হয়, পরে উনারে বিয়ে করেন। ’৬৪ সালে ডিভোর্সের পরে র্যান্ডম হাউজ পাবলিকেশনের টেক্সটবুক বিভাগে এডিটরের চাকরি নেন, দুই বছর পরে সরাসরি র্যান্ডম হাউজের ফিকশন বিভাগে এডিটর হন। উনি এই বিভাগের প্রথম কালো নারী ছিলেন যিনি সিনিয়র এডিটর হইছিলেন। লেখালেখিতে সময় দেওয়ার জন্য এডিটরের চাকরি ছাইড়া দিয়া প্রথমে স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কে, পরে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নেন। টনি মরিসনের কাজগুলার সেন্ট্রাল থিম দেখা যায় একটা আনফেয়ার সমাজে আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যক্তির লড়াই- লড়াইয়ের মধ্যেই নিজেরে খুঁজে পাওয়া, নিজের কালচারাল পরিচয় খুঁইজা পাওয়া। প্লটগুলা লিনিয়ার না হয়া এক সময় থেকে আরেক সময়ে চরিত্রগুলার ইতিহাসরে জীবন্ত কইরা তুলে। ছোটবেলায় শুইনা আসা সেইসব গল্পের কালচারাল উপাদান- মিথ, ফ্যান্টাসিরে স্বাভাবিক জীবনের সাথে মিশায়া কাহিনিরে প্রাণ দিছেন।
এইজন্য উনারে ম্যাজিক রিয়েলিস্ট মার্কেজের সাথে তুলনা করা হয়। উনার কাজগুলা কালো নারীদের সেন্টার করলেও ব্যক্তিগত জীবনে নিজেরে ফেমিনিস্ট মানতে নারাজ ছিলেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত উনি মোট ১১টা নভেল, ২টা ছোট গল্প, ২টা নাটক, একটা কবিতা সংগ্রহ আর অপেরা পাবলিশ করছেন। ছেলে স্লেড মরিসনের সাথে মিলে ৭টা বাচ্চাদের গল্পের বইও পাবলিশ করছেন। ১৯৭০ সালে উনার প্রথম নভেল দা ব্লুয়েস্ট আই পাবলিশড হয়। পরের নভেল সুলা (১৯৭৩) ন্যাশনাল বুক আওয়ার্ডের জন্য নমিনেটেড হয়। সং অফ সলোমন (১৯৭৭) এর জন্য উনি ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল আওয়ার্ড জিতেন। ১৯৮৮ সালে বিলাভেড (১৯৮৭) এর জন্য উনি পুলিতজার পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে সাহিত্য নোবেল প্রাইজ পান, কালো নারী হিসেবে ইতিহাসে প্রথম। ২০১৯ এর ৫ আগস্ট নিউ ইয়র্কের মন্টেফিওরে মেডিকাল সেন্টারে নিউমোনিয়ার জটিলতায় উনি মারা যান। রূপকথা নাওয়ার
- নাম : ইন্টারভিউ সিরিজ ১৭
- লেখক: টনি মরিসন
- অনুবাদক: রূপকথা নাওয়ার
- প্রকাশনী: : বাছবিচার বুকস
- পৃষ্ঠা সংখ্যা : 48
- ভাষা : bangla
- বান্ডিং : paperback
- প্রথম প্রকাশ: 2023