অধ্যাপক এ. কে. এম নাজির আহমদ বাংলাদেশে ইসলামী জ্ঞান-গবেষণা জগতে এক শ্রদ্ধেয় নাম। ইসলামী জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের ওপর গবেষণার জন্য শীর্ষস্থানীয় গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তিনি বাংলা ভাষায় ইসলামচর্চার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। নিজেও লিখেছেন মূল্যবান অনেক গ্রন্থ। তাত্ত্বিকতা চর্চার পাশাপাশি ইসলামী জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছিলেন সদা সংগ্রামরত নিষ্ঠাবান মুজাহিদ। ছিলেন নিষ্কলুষ অন্তর্পটের অধিকারী আত্মপ্রচারবিমুখ মুখলিস দায়ী ইলাল্লাহ।
জীবন প্রভাতে এ.কে.এম নাজির আহমদ ১৯৩৯ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলাধীন বোয়ালিয়া গ্রামে এক দ্বীনদার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কুমিল্লাতেই সমাপ্ত করেন। অতঃপর ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে। সেখান থেকে ১৯৬২ সালে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক এবং ১৯৬৩ সালে মাস্টার্স পাস করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
আদর্শ শিক্ষক এরপর এ.কে. এম নাজির আহমদ শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে কিছুদিন কুমিল্লা সরকারি কলেজেও অধ্যাপনা করেন। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সুন্দর পাঠদান পদ্ধতির কারণে তিনি ছাত্রদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। অতঃপর সংগঠনের সিদ্ধান্তক্রমে অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিক সংগঠনের কাজে নিয়োজিত হন। সংগঠনেও তাঁর মূল ভূমিকা ছিল শিক্ষকের। তিনি সংগঠনের তালিম-তরবিয়ত ও তাজকিয়ার দিকগুলো তত্ত্বাবধান করতেন। জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অধিকাংশ কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলগণ তাঁর ছাত্র। তাঁর হাতেই তাঁরা আন্দোলনের তাত্ত্বিক, আদর্শিক, আধ্যাত্মিক দিকের শিক্ষালাভ করেছেন। পেশাগত জীবনে যেমন ছিলেন ছাত্রদের আদর্শ শিক্ষক তেমনি সাংগঠনিক জীবনেও ছিলেন আন্দোলনের সহযাত্রীদের প্রিয় শিক্ষক।
দক্ষ সংগঠক জনাব নাজির আহমদ ছাত্রজীবন থেকে ইন্তেকাল অবধি ইসলামী আন্দোলনে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রচারমুখিতা, লোভ কিংবা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চিন্তা তাঁর পবিত্র জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১৯৬০ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে যুক্ত হন। অল্প কয় বছরের ব্যবধানে সাংগঠনিক প্রজ্ঞা ও দক্ষতার কারণেই তিনি সংঘের প্রাদেশিক সভাপতি নির্বাচিত হন।
এ.কে.এম নাজির আহমদ কর্মজীবনে এসে ১৯৬৫ সালে জামায়াতের রুকন হন। ১৯৬৭ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। পর্যায়ক্রমে তিনি জামায়াতের মজলিশে শূরা, কর্মপরিষদ এবং নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মনোনীত হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০১১ সনে তিনি কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্বও পালন করেন।
অধ্যাপক নাজির আহমদ ছিলেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অত্যন্ত সততার সাথে আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে তিনি সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করেন।