হিফজুর রহমান (জন্ম: ১৬ এপ্রিল ১৯৫৮) একজন বাংলাদেশি মুফতি, লেখক ও হাদিসশাস্ত্রের গবেষক। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীতে শাহ আহমদ শফীর কাছে দাওরায়ে হাদিস এবং পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় ওয়ালি হাসান টঙ্কি, আব্দুর রশীদ নোমানী ও আব্দুস সালাম চাটগামীর কাছ থেকে উচ্চতর ফিকহ পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।[১] পড়াশোনা সমাপ্তির পর তিনি অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হন এবং বর্তমানে তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭২টি। এ ছাড়া আরবি ভাষায় তার রচিত ২০টি গ্রন্থ রয়েছে।[২] ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত আল বুদুরুল মুজিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ তার সবচেয়ে সমাদৃত গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ৬৯৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হানাফি মাযহাবের সকল আলেমদের জীবনী সন্নিবেশিত হয়েছে। এরপর আট খণ্ডে রচিত আল ইয়াওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহের ফি তারাজিমি নুবালা-ই বাঙ্গাল ওয়াল আকাবির তার জনপ্রিয় গ্রন্থ। এটি বাঙালি আলেমদের জীবনীগ্রন্থ।[৩]
জন্ম ও বংশ হিফজুর রহমান ১৯৫৮ সালের ১৬ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানাধীন উত্তর হাওলা ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর ফেনুয়ার মৌলবী বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার বাবা মুহিব্বুর রহমান ছিলেন একজন আলেম এবং হুসাইন আহমদ মাদানির খলিফা। তার মা রাজিয়া খাঁতুন ছিলেন একজন গৃহিণী।[৪]
শিক্ষাজীবন আব্দুল মতীনের নিকট তার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি হয়। তার নিকট তিনি কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর তিনি ২ বছর জামিয়া ইসলামিয়া হামিউস-সুন্নাহ-তে শরহে জামী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীতে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি পাকিস্তানে গমন করে জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ার ইফতা বিভাগে ভর্তি হন। হাদিসশাস্ত্রে তার শিক্ষকদের মধ্যে আব্দুল আজিজ, হামেদ, আহমাদুল হক ও শাহ আহমদ শফী উল্লেখযোগ্য। ফিকহশাস্ত্রে তার শিক্ষকদের মধ্যে ওয়ালি হাসান টঙ্কি, আব্দুর রশীদ নোমানী, আব্দুস সালাম চাটগামী উল্লেখযোগ্য।[৫] পাকিস্তানে ফিকহ কোর্স করার সময় আব্দুর রশীদ নোমানীর তত্ত্বাবধানে ইসলামি আইনশাস্ত্রের আল-হিদায়ার ভূমিকা লেখেন আরবি ভাষায় যা পরবর্তীতে মা ইয়ামবাগি বিহিল ইনায়া লিমান ইতালিউল হিদায়া নামে প্রকাশিত হয়।[৬]
কর্মজীবন ১৯৮৫ সালে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুড়ায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৫ বছর পর ২০০০ সালে তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় যোগদান করেন। ২০০২ সালে তিনি এই মাদ্রাসায় প্রধান মুফতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৭] এছাড়াও খণ্ডকালীন মুহাদ্দিস হিসেবে পাঠদান করেন জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ মুহাম্মদপুর ঢাকা, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া কেরানীগঞ্জ ঢাকা ও জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল আমান আদাবর ঢাকাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায়।[২]