এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি রাজপুত পরিবারে ১লা নভেম্বর ১৯২০ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের গুজারখানে। এলাকাটি মার্শাল এরিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল ব্রিটিশ আমলে এখান থেকে প্রচুর সৈন্য নিয়োগ দেয়ার কারণে। এনায়েতুল্লাহ এর পরিবারও ঐতিহ্যগতভাবে সৈনিক পরিবার ছিল। ১৯৩৬ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করে একজন ক্লার্ক হিসেবে ব্রিটিশ আর্মিতে যোগদান করেন। তিনি একটি পদাতিক ইউনিটে ছিলেন এবং বার্মা ফ্রন্টে জাপানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে জাপানিদের হাতে বন্দি হন। কিন্তু তিনি জেল থেকে পালিয়ে যান। সেখান থেকে পালানোর পরে দুই বছর বার্মার জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। ভারত ফিরে আসার পর আবার ব্রিটিশ সেনাবাহিনিতে যোগদান করেন। কর্তৃপক্ষ তাকে আবার মালয়শিয়া পাঠায় বিদ্রোহ দমন করতে। তিনি মালয়শিয়া এসে খুব কাছে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন দেখলেন। এটাও অনুধাবন করলেন যে, যাদেরকে বিদ্রোহী বলা হচ্ছে তারা আসলে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা। সমগ্র মালয়শিয়ার জনগণ তাদেরকে বীর মনে করছে এবং তাদেরকে সমর্থন ও সাহায্য করছে। এনায়েতুল্লাহ মতামত ছিল যে, মালয়শিয়ানদের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজেওতো ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা চাচ্ছেন। সে সময় তিনি একটি সাহসী ও নির্ভীক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং স্বাধীনতাকামীদের সাথে যোগ দেন। যখন ব্রিটিশরা ভারতের বিভক্তি ও স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন এটা জেনে তিনি মাতৃভুমিতে ফিরে আসেন। পাকিস্তানে এসে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে একজন কর্পোরাল হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ঐ প্রথম দলটির একজন ছিলেন যারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আগমনের পর তাকে পেশওয়ার এয়ারপোর্টে স্যালুট করেছিল।
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। তখনই এনায়েতুল্লাহর সময় শুরু হল। একজন সৈনিক হিসেবে তার প্রেরণা তাকে সীমান্তে নিয়ে যায়। তিনি কলমকে অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নেন এবং একজন যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি ছিলেন একমাত্র ওয়ার করেসপন্ডেন্ট যিনি সে যুদ্ধের চাক্ষুশ সাক্ষী ছিলেন। তিনি সৈন্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন শহিদ সৈন্যদের বীরত্বের কাহিনী শুনতে। এই সমস্ত কাহিনী ও ১৯৬৫ এর যুদ্ধ নিয়ে তিনি কিছু বই লিখেছেন।
তার সাংবাদিকতার জীবনে তিনি মাসিক সাইয়ারা ডাইজেস্ট এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি এই ডাইজেস্ট এর প্রকাশনা বৃদ্ধি করেন। এর পরে নিজেই একটি পাবলিশিং হাউজ তৈরি করেন নাম দেন মাকতাবা দাস্তান। তিনি হিকায়াত নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেন যা ঐ সময়ের উর্দু ভাষার সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত ম্যাগাজিনসমূহের একটিতে পরিণত হয়। তিনি আকৃষ্ট হয়ে যান ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার প্রতি। তিনি কিছু জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন। এছাড়াও তিনি শিকার কাহিনী, তদন্ত, মনোবিদ্যা, জীবনী ও রাজনৈতিক ও সামাজিক অপকর্ম ইত্যাদি বিষয়ের উপর লিখেছেন। তিনি একশটিরও বেশি বই এবং প্রায় একশটির মত সম্পাদনা লিখেছেন। একজন লেখক হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যাবহার করেছেন। যেমনঃ মীম আলিফ, আহমদ ইয়ার খান, আলতামাশ, সাবির হোসাইন রাজপুত, ওয়াক্কাস, মেহদি খান, গুমনাম খাতুন ও এনায়েতুল্লাহ।
একজন লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি তার পরিচয়টাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতা অনেক লেখককে প্রশিক্ষিত করেছে (যেমনঃ তারিক ইসমাইল সাগর)। তিনি উর্দু উপন্যাসের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া উর্দু সাংবাদিকতারও একজন সম্পদ ছিলেন। কিন্তু তার বিশেষ কোন মুল্য ছিলনা উর্দুভাষী লেখকদের নিকটে। এনায়েতুল্লাহ অধিকাংশ জনপ্রিয় উর্দু সাংবাদিক ও কলামিস্টকে তাদের মতাদর্শের কারণে অপছন্দ করতেন। এ কারণেই একজন স্মরণীয় লেখক স্মরণের অযোগ্য হয়ে গেছেন পত্রিকার কলাম অথবা সম্পাদকীয় থেকে কিংবা কোন সেমিনার অথবা সাহিত্য আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে।
এনায়েতুল্লাহ নিজের আদর্শ বানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন আইউবীকে। তিনি ইন্তেকাল করেন ১৬ই নভেম্বর ১৯৯৯সালে লাহোরে, যে দিনটি সালাউদ্দিন আইউবীর ইন্তেকালের দিন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। লাহোরেই তাকে সমাহিত করা হয়, যেখানে তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন।