ভারতবর্ষের টানা প্রায় দুইশ বছরের রক্তাক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ঘটনাবহুল সর্বশেষ সাতটি বছরের প্রধান রাজনৈতিক চরিত্ররূপেই নয় আরো অনেক কারণেও উপমহাদেশের অনন্য চরিত্র মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৭৮-১৯৫৮)। তাঁর জন্ম পবিত্র মক্কায়। বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া কলকাতায় একান্তই ঘরোয়া পরিবেশে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা না মাড়িয়েও তিনি আধুনিক ও প্রাচীন শিক্ষার শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিতদের ওপর প্রাধান্য অর্জন করেছিলেন কেবল নিজের প্রখর প্রতিভাবলে। কি জ্ঞানবত্তায়, কি সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়, কি রাজনীতি ও সংগঠনে সর্বত্রই তিনি একটি অদ্বিতীয় বিপ্লবী চরিত্র। মুসলিম সমাজের তিনি ‘ইমামুল হিন্দ’, হিন্দুপ্রধান ভারতীয় কংগ্রেসের তিনি বরেণ্য সভাপতি। ব্রিটিশ ভাইসরয় ও কূটনীতিকদের সাথে সংলাপে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের একমাত্র প্রতিনিধি। তাঁর সম্পাদিত উর্দু সাপ্তাহিক আল-হেলাল-এর জন্য তাঁকে বারবার কারাগারে যেতে হয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও নীতিনিষ্ঠায় ভারতবর্ষের অন্য কোনো নেতাই তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না । মি. জিন্নাহর পাকিস্তান দাবির সম্মুখে একে একে গান্ধী-নেহরু-প্যাটেল সকলেই নেতিয়ে পড়লেন, কিন্তু‘ তখনো তিনি তাঁর অবদানে অটল ছিলেন । অবশেষে স্বাধীন ভারতে যখন তিনি চরম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রূপায়ন দেখলেন, তখন তাঁর স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। এ পুস্তকটি তাঁর সে মর্মবেদনার মূর্তরূপ। এটাকে তাঁর দায়মোচনের প্রচেষ্টাও বলা চলে। রাজনীতিক মাওলানা আজাদের মৃত্যু হলেও যুগস্রষ্টা লেখক ও চিন্তাবিদ বিপ্লবী আজাদ যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন।