আশরাফ আলী থানভী (জন্ম: আগস্ট ১৯, ১৮৬৩ - মৃত্যু: জুলাই ৪, ১৯৪৫) (উর্দু: اشرف علی تھانوی) ছিলেন একজন দেওবন্দী আলেম, সমাজ সংস্কারক, ইসলামি গবেষক এবং পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের থানাভবনের নিবাসী হওয়ার কারণে তাঁর নামের শেষে "থানভী" যোগ করা হয়। ভারত উপমহাদেশ এবং এর বাইরেরও হাজার হাজার মানুষ তাঁর কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি এবং তাসাওউফের শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে তিনি "হাকীমুল উম্মত" (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক) উপাধিতে পরিচিত। মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারের সংস্থা দাওয়াতুল হক তাঁরই প্রতিষ্ঠিত।
জন্ম ও শৈশব
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে / রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরীতে ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বুজুর্গ হাফেজ গোলাম মোর্তজা পানিপথীর নির্দেশক্রমে নবজাতকের নাম রাখা হয় "আশরাফ আলী"। তাঁর বাবার নাম ছিল আবদুল হক। তিনি উমর রা.এর বংশের লোক ছিলেন আর তাঁর মাতা ছিলেন ছিলেন আলী রা.এর বংশের।আল্লামা থানভী ভাইবোনদের মাঝে সকলের বড় ছিলেন। শৈশবে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান।
শিক্ষাজীবন
শৈশবেই তিনি হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন। ফার্সি ও আরবি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নিজ গ্রামেই হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছে। ১২৯৫ হিজরীতে হাকীমুল উম্মত ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। পাঁচ বছর পর ১৯ বছর বয়সে তিনি দেওবন্দের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি হাদীস, তাফসীর, আরবী সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম যুগের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের মাঝে তিনি অন্যতম। এরপর তিনি কেরাত (কুরআন পাঠ সম্পর্কিত একটি বিদ্যা) ও তাজবীদের (কুরআনের শব্দসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করার বিদ্যা) শিখেন মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে।
কর্মজীবন
১৩০০ হিজরীতে হাকীমুল উম্মত কানপুরের ফয়যে আম মাদ্রাসায় মাসিক ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর জ্ঞানের কারণে তাঁর উপাধি দেয়া হয় বাহরুল উলুম (জ্ঞানের সাগর)। পরবর্তীতে তিনি কানপুরের টপকাপুরে জামেউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন। সেখানে তিনি ১৪ বছর শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে ১৩১৫ হিজরীতে হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর পরামর্শে তিনি থানাভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেই ইসলাম প্রচার, আত্মশুদ্ধি,তাসাওউফ ও রচনার কাজ করে যান।
মৃত্যু
১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী/ জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে আল্লামা থানভী থানাভবনে মৃত্যুবরণ করেন। সেদিন সোমবার ছিল। তাঁর জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা যফর আহমেদ উসমানী। থানাভবনেই ইশকে বাযান নামক কবরস্তানে মুজাহিদ হাফেয জামেন শহীদ রাহ.-এর মাযারের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।